পারিবারিক উপন্যাস: অনুভব – পার্ট ১

Ads Inside Post

পারিবারিক উপন্যাস: অনুভব – পার্ট ১

হ্যালো ব্রো, স্বাগতম, সবাইকে, আমার আজকের আরেকটা নতুন টিউটোরিয়ালে । আশা করি সবাই খুবই ভালো আছেন। ভালো তো থাকারই কথা, কারন trickbd র সাথে থাকলে সবাই খুব ভালো থাকে । আর ভালো থাকার জন্যই মানুষ ট্রিকবিডিতে আসে। চলুন শুরু করা যাক।

অনুভব🍁🍁
পর্ব-১
ফায়াজ নাসির

পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে চায়ের ট্রে ধরাম করে ফেলে দিলো মেহের। চায়ের কাপগুলো মেঝেতে পরে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।গরম চা ছরিয়ে ছিটিয়ে পড়লো।কোনো দিকে না চেয়েই দৌড়ে পালালো মেহের।
মায়ের কথামতো শাড়ির আচলে ঘুমটা টেনে চায়ের ট্রে নিয়ে ধীরপায়ে পাত্রপক্ষের সামনে এসেছিলো মেহের।চোখের কোনা দিয়ে একবার সবার উপর চোখ বুলিয়ে নিলো।সেখানে ফায়াজকে দেখেই হটাৎ সবকিছু থমকে গেলো।হাতপা কাপতে শুরু করলো।সাথে হাতে থাকা চায়ের ট্রে ও ঠকঠক করে কাপছিলো।হাত অবশ হয়ে আসছিলো।কন্ট্রোল রাখতে পারেনি হাতের উপর।ধরাম করে চায়ের ট্রে হাত থেকে পড়ে গেলো আর মেহের ছুটে পালালো।সবাই বিষয়টি নিয়ে যখন বেশ হতভম্ব  তখন ফায়াজ বাকা হাসি দিয়ে বললো,

–আমরা কিছুই মনে করি নি।বুঝতে পারছি নার্ভাসনেস থেকে এমন হয়েছে।ইটস ওকে।

ফায়াজের মা প্রথমে বিচলিত হলেও ছেলের পছন্দ তার উপর মেয়েটিকে তারও পছন্দ হয়েছে।দেখতে খুবই সুন্দরী আর শান্তমনা লাগছে।তার ছেলের জন্য এমনই সুন্দরী,শান্ত,ভদ্র,নম্র মেয়ে চেয়েছেন।যেকিনা তার অগুছালো ছেলের জীবনটা সাজিয়ে দিতে পারবে।
ফায়াজ তার মা-বাবার সাথে মেহেরকে দেখতে এসেছে।ফায়াজের মা ফাহমিদা খান মেহেরের বাবা মাহমুদ জামানের উদ্দেশ্যে বললেন,

–আপনার মেয়ে মাশাল্লাহ আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।সামনের সপ্তাহেই আমরা ওকে ঘরে তুলতে চাই।আমার মেয়ে লন্ডনে পড়াশোনা করে ওখানেই থাকে। আমি আর ওর বাবা  সেখানেই মেয়ের সাথে থাকি।মেয়ে আসতে পারেনি একা আছে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা ছেলের বউকে ঘরে তুলতে চাই।আমাদের লন্ডন ফিরতে হবে।

মেহেরের বাবার মুখে স্বস্তির হাসি ফুটে।তিনি মেয়েকে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেন না তাই বললেন,
আমাদের কোনো আপত্তি নেই।আপনারা যেমনটা চান।মেহেরের মা বিয়ের কথা পাকা হওয়ায় মিষ্টি খেতে দিলেন।
ফায়াজের বাবা সাফায়েত নওয়াজ খানের কিছুটা আপত্তি থাকলেও ছেলের ইচ্ছের জন্য তিনিও সায় দিলেন।

অপরদিকে মেহের রুমে গিয়ে দরজা লক করে বেডে বসে আছে।এসি রুমেও ঘেমে নেয়ে যাচ্ছে।সারা শরীর থরথর করে কাপছে।তারপর ঢুকরে কেদে উঠলো।
তারপর চিতকার করছে,,
–কেন?কেন?এতবছর পর আবারো কেন?আমি তো আর কখনোই ওনার মুখোমুখি হতে চাইনি।আমি ওনার থেকে পালিয়ে বেরিয়েছি।তবে কেন আবার আমার জীবনে ফিরে এসেছে?আমি রোজ খোদার কাছে প্রার্থনা করেছি আমি যেন কখনোই ওনার মুখোমুখি না হই তবে কেন??
খোদা আমি অন্যায় করেছি তোমার কাছে?কেন আমাকে এভাবে শাস্তি দিচ্ছো??

তখনই দরজায় নক পড়লো।মেহেরের শরীর কাপছে।ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কে???

মেহেরের ছোট বোন মিহু বললো,
–আপি আমি দরজা খোল।

মেহের তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে দরজা খোলে দিলো।
মিহু হাসি হাসি মুখে ভিতরে ঢুকে মেহেরকে জড়িয়ে ধরলো,
আপি ওদের তোকে পছন্দ হয়েছে।সামনের সপ্তাহে বিয়ে।আমার আপির বিয়ে।জিজুকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।দেখতে একদম হিরোদের মতো।

মেহেরের কানে একটা কথাই বাজছে,সামনের সপ্তাহে বিয়ে।
মেহেরের বুক কেপে উঠলো।কেমন অস্থির লাগছে।তারপর বোনকে জরিয়েই কেদে দিলো।

–আপি,কাদছো কেন?কেদোনা।দেখো তুমি খুব সুখী হবে।অতীত মুছে ফেলো।

মেহের চোখের পানি মুছে মায়ের ঘরে গেলো।মেহেরের মা মরিয়ম বেগম মেয়েকে দেখে কপালে চুমু খান।
মেহের কিছুটা রেগে বলে,,
মা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না বাবাকে বলে দেও।

মরিয়ম বেগম মেয়ের কথা শুনে ঘাবড়ে যান।
–কি হয়েছে মেহের?আর তুই ভালো করেই জানিস আমি তোর বাবার মুখের উপর কথা বলতে পারবোনা।

–কখনো যদি বলতে পারতে আফসোস আমার জীবন টা নষ্ট হওয়া থেকে বেচে যেত।

–মেহের কি বলছিস তুই??ভালো ঘরে তোর বিয়ে হচ্ছে।সমস্যা কি?

–মা আমি বিয়ে করতে চাইনা।সবে মাত্র তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ করেছি।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি নি এখনো।

–সেটা পরেও করতে পারবি।

–আমি চাইনা।আমি বিয়ে কোনোদিন ই করতে চাইনা।আমি পড়াশোনা শেষ করে একটা জব নিয়ে নিজের মতো জীবনযাপন করতে চাই।একটু শান্তি চাই।

–মেহের,তুই তোর বাবার শরীরের কন্ডিশন জানিস।তোর বাবা খোজ নিয়েছে।ছেলের পরিবার খুবই ভালো।ছেলে ও মাশাল্লাহ।তোর বাবা সবটা বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

–বাবা তো সব সিদ্ধান্ত বুঝেই নেয়।এত বুঝার পরও আমার আজ এই অবস্থা।
মেহের কাদতে চলে গেলো।

–মেহের,,,
মেয়েটা এক অতীত ধরে বসে আছে।অতীত নিয়ে পরে থাকলে তো জীবন চলবেনা।সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

ফায়াজ নওয়াজ খান নাইট ক্লাবে বন্ধুদের সাথে ড্রিংক করছে।জোরে মিউজিক বাজছে।ছেলেমেয়েরা ডান্স করছে।আর ফায়াজ মদ গিলছে।এ তার রোজকার কাজ।সব কিছু বাদ দিতে পারলেও নাইট ক্লাবে বসে বসে মদ খাওয়া সে বাদ দিতে পারবেনা।মেয়েরা তার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।দূর থেকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।আর তা দেখে ফায়াজব্বাকা হাসছে।

তখনি তার ফোন বেজে উঠলো।কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করলো,,
–হ্যালো কে বলছেন??
–………
আয়াজ কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে কে হতে পারে।তাই একটু বাইরের দিকে গেলো।

–কিছু বলার না থাকলে ফোন রাখুন।
অপরপাশ থেকে চট করেই বললো
–আমি মেহের।

–মেহের,,মেহের,,মেহের।উফফ।মেহের ফোন করেছে আমায়।এখনো নাম্বার টা ভুলোনি??

–কি চান আপনি??

–কি চাই?ফায়াজ নওয়াজ খান কি চায়??হাহাহা।
আমি শুধু তোমাকে বিয়ে করতে চাই।তুমি তো জানো তোমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন আমার কতদিনের।শুধু আমার কেন??তোমার ও তো তাই না?তোমার ফ্যামিলিও সেটা চায়।কেন তোমাকে বলে নি?

–ফায়াজ,,

–মেহের কেন এত ভাবছো?সামনে তোমার বিয়ে,রাত জাগা তোমার একদম উচিত নয়।সো ঘুমাও।গুড নাইট।
ফায়াজ কন্ঠ কিছুটা শক্ত করে বললো,
আর হ্যা যদি ভুল করেও বিয়েটা ভাংগার চেষ্টা করো তবে ভালো হবেনা।তুমি জানো আমি কি কি করতে পারি??তোমার এই ভুলের তোমার পরিবার না ধ্বংস হয়ে যায়।ওনাদের আমি ইনভলভ করতে চাইনা।আমাকে বাধ্য করোনা।নয়তো সবাই এই আগুনে জ্বলবে।

মেহের ফোন রেখে দিলো।ও কি করবে বুঝতে পারছেনা। আর ফায়াজ ওর কাছে কি চায়?কিছুই বুঝতে পারছেনা।কাকে বলবে?কে বুঝবে?

ফায়াজ হাসছে।ফায়াজ হো হো করে হাসছে।শান্তির হাসি।

–ফায়াজ তুই কি করছিস এসব?এসব করে তুই কি পাবি?
ফায়াজের বন্ধু ইমরুল বললো।

–কি করছি??বিয়ে করছি।তোর বন্ধু বিয়ে করছে।তোর তো খুশি হওয়ার কথা।

–খুশি হতাম যদি মেয়ে মেহের না হতো।আমি তোকে চিনি তুই কোনো ভয়ংকর খেলা খেলছিস।ছেড়ে দে এসব।অন্য কাউকে বিয়ে করে ভালো থাক।

–ভালো??ভালো থাকার জন্যই তো বিয়ে করছি।

–তোর মনে কি চলছে বলতো??অন্যকে জ্বালাতে গিয়ে নিজে জ্বলে যাস না।

–ভালোবাসায় তো অনেক আগেই হেরে বসে আছি কিন্তু ঘৃণার খেলায় হারবো না।ঘৃণার খেলায় জিতবে শুধু ফায়াজ নওয়াজ খান।প্রত্যেকের লাভ স্টোরির এন্ডিং হ্যাপি ওর স্যাড হয়।কিন্তু আমার লাভ স্টোরি ফায়াজ নওয়াজের লাভ স্টোরি একটু ডিফারেন্ট হবে।হ্যাপি ওর স্যাড ফ্যাক্ট নয়।এখানে কোনো মজনু থাকবেনা।কিন্তু লায়লা অবশ্যই থাকবে আর তার পরিনতি খুব ভয়াবহ হবে।
আর কি বলছিলি জ্বলে যাবো??
হাহাহা।।যতটুকু জ্বলার জ্বলে গিয়েছি নতুন করে আর জ্বলবো না অনলি জ্বালাবো কিন্তু ছাই করবোনা।

মেহের জানে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে।ও হিংস্র বাঘের মুখে পড়তে যাচ্ছে।যার শিকার শুধু মেহের।ওর ইচ্ছে করছে মরে যেতে।

বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে।কিন্তু মেহের কিছুতেই বিয়েটা ভাংতে পারছেনা।কি করে ভাংবে?কি বলবে??আর কেই বা শুনবে।

মেহের ফুলে ঘেরা বিছানায় বসে আছে।ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা এর গলা চেপে ধরেছে তাই শ্বাস নিতে পারছেনা।অক্সিজেনের অনেক অভাব।ফুলের ঘ্রাণ ও ওর কাছে বিশ্রী লাগছে।বিষাক্ত লাগছে।বিছানা থেকে নেমে মাথার ওড়নাটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে সব গয়না খোলে ফেলল।তারপর জোরে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে।এই গয়নাগুলো হয়তো ওর গলা চেপে ধরেছিলো।তাই নিশ্বাস নিতে পারেনি কিন্তু এখনো আগের মতোই নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।তাই দৌড়ে বারান্দায় চলে গেলো খোলা হাওয়ায় প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে।

চলবে,,,

(বুঝতেছি না কেমন হচ্ছে😐😐।ভালো না লাগলে অবশ্যই বলবেন।)

#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-২
ফাবিহা নওশীন

বারান্দায় দক্ষিনা বাতাস হুর হুর করে বইছে।মেহের চোখ বন্ধ করে দুহাত প্রসারিত করে নিশ্বাস নিচ্ছে।কিছুটা ভালো লাগছে এখন।

ফায়াজ ড্রিংক করে ঢুলতে ঢুলতে রুমে ঢুকলো।পুরো ঘর জুড়ে ফুল আর ফুল।ফায়াজ চোখ বড় বড় করে তাকালো না ভুল নয় ঠিক ই দেখছ। ওর মনে হচ্ছে নেশা বেশি হওয়ায় কোনো ফুলের বাগানে ঢুকে পড়েছে।
তারপর ই মনে হলো,,

–ওহ,,আমি তো বিয়ে করেছি।আজ আমার বাসর।তাই এতো ফুল।
ফায়াজ একটা ফুল ছিড়ে নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে।আর বলছে,
কি সুন্দর ঘ্রাণ।তা আমার বউ কই?বাসর আমি কার সাথে করবো??
ফায়াজ বেডে কাউকে দেখতে পেলো না।না পুরো রুমে।
বারান্দায় গিয়ে ফেখে মেহের চোখ বন্ধ করে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে।

–সি ইজ হেয়ার।মাই ওয়াইফ ইজ হেয়ার।

মেহের ফায়াজের কথা শুনে চোখ খোলল।
ফায়াজকে দেখে মেহের বুঝতে পারলো ও ড্রাংক।মেহেরের এই বিয়ে,সম্পর্ক,ফায়াজকে নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিলো তা ঝেড়ে ফেলেছে।সবকিছু খোদার হাতে ছেড়ে দিয়েছে।

ফায়াজ মেহেরের দিকে এগিয়ে বলল,
আমি তো ভেবেছিলাম তুমি পালিয়েছো।ভয় পেয়ে পালিয়েছো।

“আমি আর পালাবোনা ফায়াজ।আমি তোমার সাথেই থাকবো যতদিন তুমি চাও।আমিও দেখতে চাই তুমি কি করো,,কি চাও।”
মেহের মনে মনে বলছে।

মেহের কোনো কথা বলছেনা দেখে ফায়াজের প্রচুর রাগ হচ্ছে।ও মেহেরের একদম কাছে চলে গেলো।মেহের বারান্দার রেলিং ঘেষে দাড়িয়েছিল।ফায়াজ ওর খুব কাছে চলে যাওয়ায় ও পিছনের দিকে কিছুটা হেলে দাড়ালো।খোলা বারান্দা পরে যাওয়ার রিক্স আছে তাই সরে যেতে চাইলো আর তখনই ফায়াজ দুহাত রেলিঙের দুপাশে রাখলো।ফায়াজ ওর সাথে মিশে গেছে।ওর উষ্ণ নিশ্বাস ওর মুখে পড়ছে সাথে মদের তীব্র বাজে গন্ধটাও।মেহেরের গন্ধটা সহ্য হচ্ছে না,বমি পাচ্ছে।

–ফায়াজ,সরুন।আপনার  মুখ থেকে বাজে গন্ধ বের হচ্ছে।আমি নিশ্বাস নিতে পারছিনা।

–বাজে গন্ধ??কি বলছো??তুমি ভুল বলছো।এটা মোটেও বাজে গন্ধ না।ওয়েট তোমার ধারণা পাল্টে দিচ্ছি।
ফায়াজ মেহেরের মুখের আরো কাছে চলে গেলো আর জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে।এবার আর মেহেরের সহ্য হলোনা।একদম ই নিশ্বাস নিতে পারছেনা।পেটের ভিতর সবকিছু দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।
মেহের ফায়াজকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে সরে যায় আর জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
ফায়াজকে ধাক্কা দেওয়ায় ফায়াজ রেগে যায়।মেহেরকে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে।মেহের এবার কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।ফায়াজকে দেখে এখন আর নেশাগ্রস্ত মনে হচ্ছে না।ফায়াজ চোখ মুখ শক্ত করে মেহেরকে বললো,

–তুই আমাকে ধাক্কা মারিস??ফায়াজকে??তোর সাহস তো কম নয়??এতো সাহস হয়েছে তোর।মদের গন্ধ খুব বিশ্রী না??তোকে আজ এই গন্ধ খাওয়াবো।
ফায়াজ মেহেরের দুহাত নিজের একহাত দিয়ে চেপে ধরলো আর অন্য হাতে মেহেরের নাক চেপে ধরলো।ফলে মেহের শ্বাস নেওয়ার জন্য হা করলো।তারপর নিজের ঠোঁট দিয়ে ওর ঠোঁটে রেখে জোরে জোরে ফু দিচ্ছে।মেহের শ্বাস নিতে পারছেনা।শ্বাস নিতে পারছেনা তারউপর এমন বিশ্রী গন্ধ।
মেহের ছুটার জন্য ছটফট করছে।ফায়াজ মেহেরর ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবালো।কিন্তু এবার আর ফায়াজের কোনো রেসপন্স পাচ্ছেনা।মেহেরের হাত ও হালকা লাগছে।মেহের ফায়াজের মাথা তুলে দেখে ও ঘুমিয়ে পড়েছে।ওকে টেনে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।গায়ে চাদর টেনে দিয়ে আলতো করে ওর গাল ছুয়ে দিলো।
তারপর কাদতে লাগলো।

–ফায়াজ কেন এমন করছেন??কেন নিজের সাথে নিজে খেলছেন??

ফায়াজের ঘুম ভাংতেই নিজেকে ফুলের বিছানায় আবিষ্কার করলো।তারপর উঠে বসতেই মেহেরের দিকে চোখ যায়।মেহের ওর পাশেই বেডে ঢেলান দিয়ে বসে বসে ঘুমাচ্ছে।লাল শাড়ি মুখের মেকাপ নষ্ট হয়ে গেছে।লিপস্টিক লেটকে আছে ঠোঁটের চারপাশে।কিন্তু চেহেরায় একটা আভা ফুটে উঠেছে।কি পবিত্র লাগছে।একদম বাচ্চাদের মতো।ফায়াজের ইচ্ছে করে ওর গাল আলতো করে ছুয়ে দিতে।কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে দমিয়ে রাখলো।আর মনে মনে বলছে,

–ফায়াজ,,ও দেখতেই নিস্পাপ।ওর ভিতরটা কলুষিত।ও তোর চেয়েও জঘন্য।ও একটা প্রতারক।তাই ওর এই মাসুম চেহারা দেখে ফেসে যাসনা।ওর এই চেহেরার আড়ালে ভয়ংকর কিছু লুকিয়ে আছে।ওর এই মায়াময় চেহেরা কতজনের জন্য কাল হয়েছে তার হিসেব হয়তো ও নিজেই রাখেনি।

ফায়াজ ওকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো।মেহের নিচে পড়ে গেলো।কাচা ঘুম ভাংগার কারণে কিছুই বুঝতে পারছেনা।কয়েক সেকেন্ড পর বুঝতে পারলো ও মেঝেতে।তারপর বেডের দিকে চেয়ে দেখলো ফায়াজ ওর দিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে।

–নবাবজাদির মতো ঘুমাচ্ছো কেন?কয়টা বাজে খেয়াল আছে?এখন কি আমাকে তোমাকে ডেকে তুলতে হবে??যত্তসব।

মেহের কিছু না বলে হাত ঢলতে ঢলতে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

–কোথায় যাচ্ছো??

মেহের চোখ বড়বড় ফায়াজের দিকে তাকালো।
কি আশ্চর্য ছেলে।ঘুম থেকে উঠে মানুষ কই যায়?আর দেখছে আমি ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছি তবুও জিজ্ঞেস করছে?
ফায়াজ উঠে মেহেরের কাছে গিয়ে বললো  এটা আমার ওয়াশরুমে যাওয়ার টাইম।আগে আমি ফ্রেশ হবো তারপর তুমি।লাইনে থাকো।
ফায়াজ ওয়াশরুমে চলে গেলো।মেহের অগত্যা দাড়িয়ে রইলো।
ওয়াশরুমের ভিতর থেকে পানির আওয়াজ হচ্ছে।৩০ মিনিট হয়ে গেলো কিন্তু তার বের হেয়ার নাম নেই।
মেহের বিরক্ত হয়ে জামাকাপড় নিয়ে বসে আছে।আর মনে মনে গালাগাল করছে 

–একটা ছেলের ফ্রেশ হতে এত সময় লাগে?কয়দিন গোসল করে নি আল্লাহই জানে।১০দিনের গোসল একদিনে করছে।

মেহের ফ্রেশ হয়ে হাল্কা পেস্ট কালার শাড়ি পরে কোনো সাজগোছ ছাড়াই নিচে গেলো।
মেহের নিচে যেতেই ওর শাশুড়ী হাসি মুখে এগিয়ে এলো তারপর নাস্তা করতে বসালো।মেহেরের পাশে ফায়াজ এসে বসে নাস্তা করতে শুরু করলো।সার্ভেন্টরা মেহেরকে খাবার সার্ভ করছে।মেহেরের খুব ক্ষুধা পেয়েছে তাই দ্রুত টুষ্টে একটা কামড় দিতেই ফাহমিদা খান বললো,

–মেহের তুমি সাজগোজ করোনি কেন?নতুন বউ তুমি।সাজগোজ না করলে মানায় না।তাছাড়া কিছুক্ষণ পর মেহমানরা আসবে তোমাকে দেখতে।গলায়,হাতে,কানে কিছু পড়ে নিও। নয়তো নানান কথা বলবে।
মেহের মাথা ঝুলিয়ে সায় দিলো।

ফায়াজ বলে উঠলো,,
–কি করবে??এতদিন বিধবার বেসে ছিলো অভস্ত হয়ে গেছে।ও হয়তো ভুলেই গেছে গতকাল ওর বিয়ে হয়েছে।ও এখন আর বিধবা নয়।
বলেই পৈচাশিক হাসি দিলো।
মেহেরের খাবার গলায় আটকে গেলো।ছলছল চোখে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।
এভাবে বলতে পারলো??

ফাহমিদা খান ছেলেকে ধমক দিয়ে বললেন,
ফায়াজ,,বড় হয়েছো ঠিকি কিন্তু মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কিছুই হয়নি।কখন কোথায় কি বলতে হয় শিখো নি?

ফায়াজ অপরাধী ভংগীতে কান ধরে বললো, সরি মম।সরি মেহের।

নাস্তা শেষে ফায়াজের মা ফায়াজকেনিজের রুমে নিয়ে গেলেন।
–কি সমস্যা ফায়াজ??
–কি সমস্যা??কি করেছি আমি মম?
–কি করেছো জানো না?মেহেরকে ওসব বলার কারণ কি?
–মম সরি তো বলেছি।
–সরি কোনো ফ্যাক্ট না।তুমি এভাবে কেন বললে?তুমি তো জেনেশুনেই মেহেরকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়েছো।আমরাও আপত্তি করিনি এ নিয়ে তোমার সমস্যা থাকলে আগেই বলতে পারতে।কিন্তু এভাবে একটা মেয়েকে অপমান করা কষ্ট দেওয়ার অধিকার তোমার নেই।ওর চেহারা দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ও নাখোশ।ওর খেয়াল রাখো।
–ওকে মম সরি।
–তুমি কখনোই আর এসব বলে ওকে হার্ট করবেনা।মনে থাকে যেন।আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাই।মন দিয়ে সংসারটা করো।
–ওকে মম।

আয়াজ মাকে খুব ভালোবাসে।তাই চুপচাপ সব মেনে নিলো।ফায়াজ রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে গেলো।মেহের ফোন নিয়ে কিছু একটা করছিলো তখনই ফায়াজ ওকে টেনে তুলে দুবাহু চেপে বলে,

–তোর সমস্যা কি হা??তুই কি প্রমাণ করতে চাস?চেহেরায় দুখী ভাব এনে সবাইকে এটা জানাতে চাস তোর সাথে আমার সম্পর্ক ভালোনা।

মেহের ভয়ে চুপসে আছে কথা বলছেনা।তা দেখে ফায়াজের আরও রাগ বেড়ে গেলো।
–স্পিক আপ ডেম ইট।
মেহের কেপে উঠলো,
–না,আমি তা,,,
–তাহলে,,আগের স্বামীকে খেয়েছিস এখন আমাকে খেয়ে আবার বিধবা হতে চাস??
ফায়াজের কথাটা মেহেরের বুকে কাটার মতো বিধলো।মনে হচ্ছে হাজারো ছুড়ি দিয়ে হৃদয়টাকে কেউ ছিন্ন ভিন্ন করে দিলো।এবার আর চোখের পানি আটকাতে পারলো না।

–নো নো,,,একদম না।চোখে নো পানি।এগুলো তুলে রাখো ভবিষ্যতের জন্য।এখন যাও সাজগোজ করে নেও।আমরা ছোটলোক নই।মেহমানদের কাছে নাক কাটবে সেটা মেনে নেবো না।
আর শোনো মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখবে সবসময়।

মেহের চোখের পানি মুছে আয়নার সামনে গিয়ে বসলো।তারপর কাপা কাপা হাতে লিপস্টিক তুলে নিলো।ওর হাত কাপছে।
গত তিন বছর ধরে নিজের হাতে সাজেনি।লিপস্টিক ও ছুয়ে দেখেনি।বিয়ের দিন পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিয়েছিলো।যদিও ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু বিয়ে বলে কথা।
মেহের কাপা কাপা হাতে ঠোঁটে লিপস্টিক দিচ্ছে যা ফায়াজের চোখ এড়ায়নি।

মেহের কানে ঝুমকো,গলায় চেইন,দুহাতে চুরি,আংটি,ঠোঁটে লিপস্টিক,চোখে কাজল,কপালে ছোট একটা চিপ,চুলে খোপা করে নিজেকে পরিপাটি করে নিলো।
তারপর ফায়াজের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ালো।
ফায়াজের চোখ আটকে গেছে মেহেরের দিকে।এই হালকা সাজেও মেয়েটাকে অপ্সরা লাগছে।ফায়াজ মেহেরের চারদিকে হেটে বললো,

–হুম ঠিকঠাক।তবে কি জানো যার ভিতরটা নোংরা সে বাইরে যতই সুন্দরী হোক না কেন সে প্রকৃত সুন্দরী নয়।যেমন তুমি।
মেহের চুপচাপ ফায়াজের অপমান হজম করে নিলো।
তারপর মেহের,,,

#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-৩+৪
ফাবিহা_নওশীন

“আরে ভাবী তুমি তো খুব সুন্দর।ওপপস!!এখন দুঃখ হচ্ছে কেন যে আসলাম না।ভাইয়া তুই এই পরীটাকে কই পাইলি??”

ফায়াজের বোন ফাইয়া ভিডিও কলে ভাই-ভাবীর সাথে কথা বলছে।

ফায়াজ বললো,
–ওই খালি ভাবী ভাবী করছিস কেন??আমাকে দেখিস না??আমি কম কিসে?আমার মতো দুচারটে হ্যান্ডসাম ছেলে দেখা তো পারলে??

ফাইজা বললো,,
–হইছে ভাই।আর নিজের প্রসংসা করে ইমেজ বাড়াতে হবেনা।আয়নার সামনে গিয়ে দাড়া তাহলেই আস্ত হনুমান দেখতে পাবি।

ফায়াজ,,
–ওই জংলী,লন্ডনে থেকে অনেক ভাব বেড়েছে তাই না??সামনে আয় ফকন্নি।

-আসছি ২মাস পর।পরীক্ষা শেষ করে।এখন যা আমি ভাবীর সাথে একা কথা বলবো।

–কি কথা বলবি?

–নিশ্চয়ই তোর সুনাম করবো না।তোর বদনাম করবো।

ফায়াজ মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।

–ভাবী আমি তো তোমার দিক থেকে চোখ ফিরাতে পারছিনা।এই জন্যই ভাইয়া এতো পাগল হয়ে পড়েছিল তোমাকে বিয়ে করার জন্য।
আচ্ছা যাই হোক, তোমাকে একটা কথা বলি।ভাইয়ার প্রতি একটু কেয়ার রেখো।রাগী,জেদি হলেও মনটা অনেক ভালো।একটা অতীত ভাইয়াকে ভেংগে দিয়েছে,বদলে দিয়েছে।ভাইয়া যদি তোমার সাথে রাগারাগি করে একটু সহ্য করো।ভাইয়ার সাথে একটু মানিয়ে নিও প্লিজ।এটা আমার অনুরোধ।

মেহের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
–ঠিক আছে আপনি চিন্তা করবেনা।

ফাইয়া চোখমুখ কুচকে চিতকার করলো,,
–ভাবিইইইই,,

মেহের ঘাবড়ে গেলো।
–কি হলো??

–তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন??আমি তোমার ননদ।আমি তোমাকে তুমি করে বলছি আর তুমি আপনি।কি লজ্জা কি লজ্জা।

মেহের ফিক করে হেসে দিলো।
–ঠিক আছে আমি তুমি করেই বললো।

ওদের মধ্যে অনেকক্ষন কথা হলো।ফাইয়া মেয়েটা অনেক ভালো।মেহেরের খুব পছন্দ হয়েছে।

বাসায় বিভিন্ন মেহমান এলো।কেউ কেউ মেহেরের প্রসংশা করলো আবার কেউ কেউ খুত ধরতে ব্যাস্ত।

ডিনার শেষে মেহেরের শাশুড়ী মা মেহেরকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।
মেহেরকে বসিয়ে দরজা লক করে দিলো। মেহের বুঝতে পারছে ওনি ইম্পর্ট্যান্ট কিছু বলবে।
ফাহমিদা খান মেহেরের পাশে বসে ইতস্তত করছে।কিভাবে কি শুরু করবে বুঝতে পারছেনা।তাই দেখে মেহের বললো,
–মা আপনি কিছু বলতে চাইছেন।মা হিসেবে মেয়েকে নিঃসংকোচে বলতে পারেন।
তারপর মেহেরের গালে হাত রেখে বললো,,

–দেখো মা তুমি এখন এই বাড়ির বউ।এটা এখন তোমার বাড়ি,তোমার সংসার।তোমাকে আপন ভেবে নিজের মেয়ে ভাবে কিছ কথা বলছি।

–হ্যা বলুন।

–কথাটা ফায়াজকে নিয়ে।ও ছোট থেকেই রাগী,জেদি একটা ছেলে।যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।না পেলে আদায় করে নিয়েছে।ও তোমার স্বামী ওর সব কিছু জানার অধিকার তোমার আছে।
কয়েক সেকেন্ড থেমে বললো,। একটা মেয়েকে পছন্দ করতো কিন্তু মেয়েটাকে ওকে ঠকিয়েছে আর এটা ও মেনে নিতে পারেনি।তাই নিজেকে সামলাতে পারেনি।নষ্ট করে দিয়েছে নিজেকে।মদ,নেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে।স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।কখন কি করে বলা মুশকিল।বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ওকে শোধরানোর।বিয়ে দিতে চেয়েছি।কিন্তু কিছুতেই রাজি হয়নি।তারপর একদিন তোমার কথা বললো।আমরা আশার আলো দেখতে পেলাম।তোমাকে দেখেও মনে হয়েছে তুমি আমার ছেলেটাকে শোধরাতে পারবে।সুখী করতে পারবে।
তোমাকে সকালে দেখে আর নাস্তার টেবিলে ওর কথা শুনে বুঝতে পেরেছি ও তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেনি।এই জন্য আমি মা হয়েভ্ব্র পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।

–মা এসব কি বলছেন,ক্ষমা কেন চাইছেন?ওনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।সত্যি বলছি।

-আমি জানি ওকে।আমি তো ওর মা।তুমি একটু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো ওর সাথে।ও যেন ওর অতীত ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে পারে সেই চেষ্টা করো।হাল ছেড়ে দিওনা।মেয়েদের অনেক শক্তি।মেয়েরা চাইলে অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে।
আমরা আগামীকাল চলে যাচ্ছি।তাই সবকিছু তোমাকে বলে দিলাম।এখন থেকে তোমাকে একাই সামলাতে হবে।আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে নির্দিধায় জানাবে।

–জ্বি,,আচ্ছা।দোয়া করবেন আমাকে।

–দোয়া করি তোমাদের জুড়ি অক্ষয় হোক।সুখী হও।ভালো থাকো।
তারপর তিনি কতগুলো গয়না আর শাড়ি এনে মেহেরের হাতে দিলেন।

–এই শাড়িগুলো তোমার জন্য কিনেছি আমি নিজে পছন্দ করে।আর এই গয়নাগুলো আমাদের বংশের।আজ থেকে এগুলো তোমার।না করবে না।এইগুলো আমার দোয়া।

মেহের হাসি মুখে সব গ্রহণ করলো।তারপর সালাম করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।রুমে গিয়ে সবকিছু আলমারিতে গুছিয়ে রাখছে।গুছিয়ে রেখে পিছনে ঘুরতেই চমকে গেলো।ফায়াজ দেয়ালে এক পা উঠিয়ে ঢেলান দিয়ে একমনে মেহেরের দিকে চেয়ে আছে।তারপর পা ফেলে মেহেরে দিকে এগিয়ে আসছে আর আস্তে আস্তে বলছে,
শাড়ী,,গয়না,,,,
মেহেরের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে।মেহের ভয় পেয়ে পিছাতে লাগলো।পিছাতে পিছাতে আলমারির সাথে মিশে গেলো।ও বুঝতে পারছেনা ফায়াজ কেন এমন করছে।কেন ওর দিকে এভাবে এগুচ্ছে।ভাবতে ভাবতে ফায়াজ ওর একদম কাছে চলে গেল।
ফায়াজ ওর গালের উপর পড়া চুলগুলোতে হাত বুলাচ্ছে।ফায়াজ ওর কাছে যেতেই মেহের বিশ্রী গন্ধ পেলো।
মালতা মাতলা কন্ঠে ধীরে ধীরে বললো,
–তোমার মনে আছে মেহের,,তোমার এই চুল দেখে আমি দ্বিতীয় বার তোমার প্রেমে পড়েছিলাম??
মেহের বুঝতে পারলো ফায়াজ ড্রিংক করেছে।হুশে নেই।
আর ভাবছে ড্রিংক করলো কিভাবে?আজকে তো বাসার বাইরে যায়নি উনি।তারপর সোফার পাশে ট্রি টেবিলে চোখ যেতেই মদের বোতল,গ্লাস দেখতে পেলো।
ফায়াজ ওর চুল সরিয়ে গালে স্লাইড করতে করতে গালের দিকে ঠোঁট এগুতেই মেহের ওকে বাধা দিলো।–প্লিজ সরুন।আমার ভালো লাগছে না।আপনি হুশে নেই।শুয়ে পরুন।

ফায়াজ চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তাও খোলা রেখে বললো,,

–ভালো লাগছেনা??আমার ছোয়া ভালো লাগছে না??কেন তোমার ফার্স্ট হাসব্যান্ড তোমাকে এর চেয়ে ভালো ভাবে ছুয়েছিলো??তা কিভাবে ছুয়েছিলো আমাকেও একটু বলো।আমিও শুনি।ছেলেটার কি এমন ক্ষমতা ছিলো শুনি।টেল মি ফার্স্ট কিভাবে ছুয়েছিলো??

–ফায়াজ আজেবাজে কথা বলবে না।উনি মারা গেছেন।প্লিজ একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এসব বলবেন না।আমাকে যা বলার বলুন।

ফায়াজ চোখমুখ লাল করে কড়া গলায় বললো,,
–এতো ভালোবাসা?? একদিনের হাসব্যান্ডের জন্য এতো ভালোবাসা?? একদিনে কি এমন দিয়েছিলো তোকে??কি এতো ভালোবেসেছিলো যে আমার কথা তোর কাছে বিষের মতো লাগছে?
এই দাড়া দাড়া বিয়ের আগে থেকেই চিনাজানা ছিলো না তো?এর আগে থেকেই ছুয়াছুয়ি চলছিলো তাই না?

মেহের এবার কেদে দিলো।ফায়াজের এই জঘন্য কথা গুলো সহ্য করতে পারছেনা।ওর চরিত্র নিয়ে বাজে কথা গুলো গায়ে খুব লাগছে।ও ভাবতে পারছেনা ফায়াজ ওকে এসব কি করে বলছে?ওর ভাষা এতটা খারাপ।

–আমি কসম করে বলছি আমি ওনাকে বিয়ের পরেই প্রথম দেখেছি।
মেহের কাদতে কাদতে ঠোঁট ফুলাচ্ছে।ফায়াজ এটা দেখে আরো রেগে যায়।জোরে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলো।তারপর চুল টেনে তুলে বললো,

–আরেকবার যদি ঠোঁট ফুলাস তবে আমি তোর এই ঠোঁট কেটে ফেলবো।
মেহের ভয়ে মুখ চেপে ধরলো।চুলের গোড়ায় প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।মুখ চেপে ধরে কাদছে।

ফায়াজ চোখমুখ শক্ত করে বললো,
–এতো জ্বলছে এক্স হাসব্যান্ডের জন্য।এত বছর পরেও ভুলতে পারিসনি??কই আমার জন্য তো জ্বলে না।আমাকে তো মনে পড়ে না??
দূরর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে।তোকে দেখলে আমার ঘৃণা হয়।

তারপর চুল ছেড়ে দিয়ে আবার বোতল থেকে মদ গ্লাসে ঢালছে।
মেহের দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।তারপর কল ছেড়ে মন মতো কাদছে।কাদতে কাদতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো চোখে মুখে পানি দিয়ে শুয়ে পরলো।কিন্তু ওর চোখে ঘুম নেই।আড়চোখে ফায়াজের দিকে তাকাচ্ছএ ফায়াজ একমনে মদ গিলছে।

–ফায়াজ,এমন কেন করছেন?কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন??কেন আমার সাথে এমন করছেন?আমি তো আপনাকে বলি নি আমাকে বিয়ে করতে?আমি তো আর বিয়েই করতে চাইনি।এভাবেই জীবন টা কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।তবে কেন এলেন আমার জীবনে??
এসবের কোনো উত্তর নেই মেহেরের কাছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই মেহের ঘুমিয়ে পরলো।

সকাল,,,
মেহেরের ঘুম ভাংতেই লাফিয়ে উঠলো।কেননা গতকাল দেরিতে ঘুম ভাংগাতে ফায়াজ ওকে ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছিলো।পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছিলো অনেক।কনুইতে কিছুটা ছিলে গেছে।এখনো ব্যথা আছে।তাই নতুন করে আর ধাক্কা খেতে চায়না।
কিন্ত ফায়াজকে বিছানায় পেলোনা।ড্রিংক করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরেছে।মেহের ফ্রেশ হয়ে নিচে যাচ্ছে।
আজকে দুপুরেই মেহেরের শ্বশুর শাশুড়ী লন্ডন চলে যাবে।ভাবতেই মেহেরের মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।শুধু মন খারাপ ই না।ভয় ও করছে।না জানি ওনারা যাওয়ার পর ফায়াজ ওর সাথে কি করে।ভাবতে ভাবতে মাথা চক্কর দিচ্ছে।
মাথাটা এমনিতেই ব্যথা করছে কাল রাতে কাদার ফলে।

মেহের নিচে গিয়ে অবাক।কারণ সোফায় তার শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে ওর,,,

মেহেরের বাবা-মা,ছোট বোন মিহু আর দুজন কাজিন সিস এসেছে।এত সকাল সকাল ওদের দেখে মেহের কিছুটা অবাক।

মেহেরকে দেখে মিহু দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো।মিহুকে পেয়ে মেহের খুব খুশী।মেহের ও বোনকে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরলো।মিহু হটাৎ মেহেরকে ছেড়ে দিয়ে বললো,,

–আপি,,তোমার শরীরে কেমন নতুন একটা ঘ্রাণ পাচ্ছি।

মেহের আগ্রহ নিয়ে বললো,,
–নতুন ঘ্রাণ??

মিহু দুস্ট হাসি দিয়ে বললো,, জিজু জিজু ঘ্রাণ।

মেহের মিহুর কান ধরে বললো,
–খুব পাকা হয়েছিস না??ভুলে যাচ্ছিস আমি তোর বড় বোন?বড় বোনের সাথে এভাবে কথা বলে কেউ??

মিহু অবাক হয়ে বললো,
–বড় বোন?দেখো আপি আমাদের দুজনের হাইট এক সমান।তাহলে বড় ছোট কি করে হবে।

–তোর সাথে আমি কথায় পারবো না।চেষ্টা করাও বিথা।চল বাবামায়ের কাছে যাই।

মেহের হেসে হেসে মিহুর সাথে কথা বলছে।সেটা দেখে মেহেরের বাবা-মা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।ভেবে নিলো মেয়ে ভালোই আছে।মেহের গিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বললো।কাজিন আর বোনের সাথে অনেক গল্প করলো।
তবে মেহের ভাবছে অন্য কথা।ফায়াজ যদি উল্টো পাল্টা কিছু বলে ওদের সামনে।এটা ভেবে মেহের অনেক চিন্তিত।

ফায়াজ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসেই মেহমান দেখতে পেলো।ফায়াজকে দেখে মেহেরের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।ফায়াজ কি না কি বলে কিন্তু মেহেরের চিন্তায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে ফায়াজ হাসি মুখে শ্বশুর শাশুড়ীকে সালাম করে খোজ খবর নিলো।মেহেরের বোন আর কাজিনদের সঙ্গে গল্প করছে।

মেহের ফায়াজের এমন রুপ দেখে খুশি হলো।
–যাক গুন্ডাটা সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করছে।সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করে।আমার সাথেই শুধু গুন্ডামি।আমাকে দেখলেই মাথায় পোকা উঠে যায়।
কিছুক্ষণ পর সবাই চলে গেলো।ওনারা ফায়াজের বাবা মার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।
ফায়াজের বাবা মাকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে যাচ্ছে ফায়াজ ও মেহের।
এয়ারপোর্টে ফায়াজের মা ফায়াজকে ইচ্ছে মতো শাসিয়ে গেলো।মেহেরের সাথে উল্টো পাল্টা আচরণ যেন না করে,ওর খেয়াল যেন রাখে।আর মেহেরকে বললো ফায়াজ ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করলে ফোন করে যেনো জানায়।ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

ফায়াজ ড্রাইভ করছে মেহের পাশে বসে আছে।তবে জানালার দিকে ঘুরে বসে আছে।একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে।জানালার গ্লাসে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ফায়াজ মিটমিট করে হাসছে।ব্যাপারটা মেহেরের কাছে মোটেও ভালো লাগছেনা।ওর এই হাসির মধ্যে কেমন একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।মেহেরের অনেক ভয় লাগছে।এতদিন শ্বশুর শাশুড়ী ছিলো কিন্তু এখন একা।
ফায়াজ মেহেরের চেহারায় আতংক দেখতে পাচ্ছে।যা ফায়াজের মনে পৈচাশিক আনন্দ দিচ্ছে।ফায়াজ মনে মনে বলছে,,
–ওয়েট বেবি,মাত্র তো গেম শুরু।তোমার জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।সো বি রেডি।

ফায়াজ গাড়ি থেকে নেমেই বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।তারপর সব সার্ভেন্টকে ডাকতে শুরু করলো।৫জন সার্ভেন্ট একসাথে এসে দাড়ালো।
মেহের বাড়ির ভিতরে ঢুকে সবাইকে এভাবে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলো।
মেহের জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।
ফায়াজ মেহেরকে বললো তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
মেহের কৌতহুলবশত জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
সবাই এভাবে দাড়িয়ে আছে কেন??

ফায়াজ মেহেরের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে হাসি দিয়ে সকল সার্ভেন্টের হাতে একটা করে খাম দিয়ে বললো,
–তোমাদের দুমাসের অগ্রিম স্যালারি।দুমাস তোমাদের ছুটি।

মেহের চোখ বড়বড় করে ফায়াজের দিকে তাকালো।ছেলেটা কি করছে কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না।সব হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।

একজন সার্ভেন্ট অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কিন্তু স্যার কি উপলক্ষে??
ফায়াজ ধমকের সুরে বললো,
–সে কৈফিয়ত তোমাদের দেবো?ছুটি দিয়েছি,অগ্রিম স্যালারি দিয়েছি আর কি চাও?

ওরা কিছু না বলে চলে গেলো।মেহের ফায়াজের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে তারপর কিছুটা সাহস সঞ্চার করে জিজ্ঞেস করলো,
–ওদের সবাইকে ছুটি দিয়ে দিলেন কেন?

ফায়াজ মেহেরের দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে মেহেরের দিকে এগিয়ে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–ফাকা বাড়িতে তোমাকে খুন করে গুম করে দেবো তাই বাসা ফাকা করলাম।
ফায়াজের কথা শুনে মেহেরের গলা শুকিয়ে গেলো।হাত পা কাপতে শুরু করলো।ফায়াজের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।ফায়াজ রহস্যময় হাসি দিলো।মেহেরের ফায়াজকে ঠিক লাগছেনা।মেহের আস্তে আস্তে ফায়াজের কাছ থেকে সরে গেলো তারপর ঘুরে এক দৌড়ে উপরে গিয়ে রুমের দরজা লক করে দিলো।

ফায়াজ মেহেরের ভয়ার্ত চেহারা দেখে পৈচাশিক শান্তি পেলো।আর মেহেরের এভাবে ভয় পেয়ে চলে যাওয়া ব্যাপার টা ওকে প্রচুর বিনোদন দিলো।না চাইতেও হোহো করে হেসে দিলো।
তারপর বললো,

–ভীতু ভীতুই রয়ে গেলো।যাইহোক ফায়াজ এই ভীতুর ডিমকে ভয় দেখিয়ে অনেক মজা পাবি।নাও মাই সুইট ওয়াইফ ওয়েট এন্ড সি।

সকাল সার্ভেন্টরা চলে গেলো।

রাতের বেলা,,,

মেহের সব কিছু গোছিয়ে রুমের সামনে এলো কিন্তু ঢুকার সাহস পেলোনা।কেমন ভয় ভয় লাগছে।মেহের ভালো করেই জানে ফায়াজের মাথায় কোনো আজাইয়া কিছু ভনভন করছে। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকটা সাহস সঞ্চার করে সূরা পরে বুকে ফু দিয়ে ভিতরে ঢুকলো।

ভিতরে ঢুকে দেখলো ফায়াজ পায়ের উপর পা তুলে ছুড়ি দিয়ে টি টেবিলের উপরে কি যেনো কাটাকাটি করছে।
ফায়াজের হাতে ছুরি দেখে মেহেরের গলা শুকিয়ে গেলো।আর ভাবছে,ওনার হাতে ছুরি কেন?ওনি কি সত্যি সত্যিই আমাকে মারবে?

ফায়াজের কথায় মেহেরের ঘোর ভাংলো।
–এইতো তুমি এসে পড়েছো,,এদিকে এসো।
মেহের বাধ্য মেয়ের মতো সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ওড়নায় আংগুল দিয়ে পেচ্ছাচে।

–তুমি জানো তোমার জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছি?শুধু আমিই না আমার এই ছুরিটাও তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
মেহের ভয়ে ভয়ে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে।ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ড্রিংক করেছে কিন্তু অল্প।সম্পুর্ণ হুশে আছে।
ফায়াজ উঠে দাড়িয়ে মেহেরের গলায় ছুরিটা রাখলো।মেহের শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।ওর মুখ দিয়ে কোনো টু শব্দ বের হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে শ্বাস নিতেও ভুলে যাচ্ছে।

ফায়াজ মেহেরের গলার চারদিকে ছুরি দিয়ে স্লাইড করছে।তারপর বললো,
–খুব ভুল করে ফেলেছো মেহের।খুব বড় ভুল।আমাকে ধোকা দিয়েছো।আমার সাথে প্রতারণা করে কেউ পার পায়নি আর তুমি তো পুটিমাছ।তুমি পার পাবে না।এই ভুলের শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে সুইটহার্ট।
মেহের কিছু বলতে চাইছে কিন্তু গলা দিয়ে বের হচ্ছেনা।
ফায়াজ ছুরিটা গলা থেকে তুলে গালে নিয়ে গেলো।তারপর গালে স্লাইড করতে লাগলো।মেহের নড়াচড়া করছেনা।মনে হচ্ছে জমে আছে।কিছুক্ষন পর পর ঢুক গিলছে।
ফায়াজ ছুরিটা গালে স্লাইড করতে করতে বললো,
–তুমি একদিন কেন শাস্তি পাবে??তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে আমি এতদিন কষ্ট পেয়েছি।আর আমাকে ঠকানোর জন্য আজীবন তোমাকে কষ্ট পেতে হবে।আজীবন।তোমাকে আমি বিয়ে করেছি ঠিকি কিন্তু তুমি আমার বউ নও।
ফায়াজ গালে হাত দিয়ে বললো তুমি,,তুমি,,,হুম পেয়েছি।তুমি আমার গোলাম, দাসী আর রক্ষিতা।বিয়ে করা রক্ষিতা।আমার স্ত্রীর সম্মান পাওয়ার কোনো যোগ্যতা তোমার নেই।
মেহেরের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু কোনো শব্দ করছেনা।ওর এখন ইচ্ছে করছে ফায়াজের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে নিজেই নিজের গলা কেটে ফেলতে।
ফায়াজ মেহেরকে কাদতে দেখে বললো,
–নো নো বেবি,,এখন নয়।আমার কথা শেষ করতে দেও তারপর যত ইচ্ছে হয় কেদো।
কাল থেকে ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ,ডিনার সব তুমি বানাবে।এই বাড়ির সব কাজ তুমি করবে।আর আমার ঘুম ভাংগার আগে তোমার ঘুম না ভাংগে তবে তোমার কপালে খুব দুঃখ আছে।নাও গেট লস্ট।আমার সামনে থেকে যাও।

মেহেরের গলা থেকে ছুরি সরিয়ে নিলো।মেহের হাফ ছেড়ে বাচলো।যেন ধু ধু মরুভূমিতে একটু পানির সন্ধান পেয়েছে।

ফায়াজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছে তুমি আমার সাথে যা করেছো তার শাস্তি আমি তোমাকে তিলে তিলে দেবো।তোমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে ভস্ম করে দেবো।আমার ভিতরে যে আগুন তুমি জ্বালিয়েছো তাতে তো আমি একা পুরবো না।তোমাকেও পুরতে হবে।
ফায়াজের প্রচুর পরিমাণে সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে।পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে রাখলো তারপর  চিতকার করছে,,
–মেহের মেহের,,,

মেহের ফায়াজের চিতকার শুনে লাফিয়ে উঠলো।মাঝারাতে আবার কি ভুত মাথায় ভর করেছে তা ভাবতেই কলিজা কেপে উঠছে।

চলবে,,,,

(যারা মেহেরের বিষয়টি বুঝতে পারছেন না তাদের বলছি আপনারা আগের পর্বে পরেছেন ফায়াজ মেহেরকে বলেছে একদিনের স্বামীর প্রতি এতো ভালোবাসা।অনেকে হয়তো বুঝেছেন আবার অনেকে বুঝেন নি।যারা বুঝেন নি তাদের বলছি মেহেরের এর আগে বিয়ে হয়েছিলো।আর বিয়ের পরের দিন কোনোভাবে হাসব্যান্ড মারা যায়।ফায়াজ মেহেরের দ্বিতীয় হাসব্যান্ড।আর ফায়াজ মেহেরকে আগের বিয়ে আর স্বামীকে নিয়ে কথা শুনায়।শুনানোর ও কারণ আছে তা আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন।ধন্যবাদ।)

তো তাহলে আমার আজকের পোস্ট আমি এখানেই শেষ করছি। আশা করছি পোস্টটি আপনার বিন্দুমাত্র হলেও উপকার করবে। সবাইকে ধন্যবাদ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।

মানুষ মাত্রেই ভুল হয় , তাই পোষ্টে কোন ভুল থাকলে দয়া করে মাপ করে ‍দিয়েন, আর প্লিজ কমেন্টে লিখে ভুলগুলা শোধরানোর সুযোগ করে ‍দিয়েন।
কোন কিছু না বুঝলে বা কোন কিছু জানার থাকলে, আমাকে কমেন্টে জানান।
পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি লাইক দিবেন এবং কমেন্টে তা জানিয়ে দেবে যেন আমি আরো নতুন নতুন পোস্ট করার উৎসাহ পাই।

আর এরকম নিত্যনতুন আরো তথ্য জানতে এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকার জন্য আপনি আমাদের ফেইসবুক গ্রুপে জয়েন হতে পারেন l group link—>

আর যেকোন প্রবলেমে ফেসবুকে আমি [—>profile link]
তাহলে সবাইকে ট্রিকবিডির সাথে থাকার জন্য আমন্ত্রন জানিয়ে আজকে আমি আমার আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।


The post পারিবারিক উপন্যাস: অনুভব – পার্ট ১ appeared first on Trickbd.com.






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ