স্মার্টফোনের দাম কমেছে, সস্তা ফোনে এখন অনেক ফিচার খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু দাম কমার সাথে সাথে কোয়ালিটি তেও নেমে এসেছে এক বিরাট পার্থক্য। এখন কোম্পানি রাও নানান অডিয়েন্স টার্গেট করে নানান প্রাইস পয়েন্ট এ ফোন রিলিজ করে। — কমদামে ফোন তো পেয়ে যাবেন, কিন্তু দেখেন ক্যামেরা ভালো না, ক্যামেরা ভালো তো ডিসপ্লে ভালো না। মানে ঝামেলা রয়েছেই।
ভালো ক্যামেরা ফোন শুরুই হয় ২০ হাজারের পর থেকে। এই অবস্থায় আপনি যদি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন বা পুরাতন ফোন কিনার চিন্তা করেন সেটা বেশি যৌক্তিক, মানে আপনার বাজেট যদি কম হয়ে থাকে আর কি! ১ বছর বা ৬ মাস আগের ফোন কিন্তু আপনি কম দামে পেয়ে যাবেন। যেটা সহজেই আপনার বাজেটের মধ্যে ফিট হবে এবং আপনি বেটার ফিচারস গুলোও পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা অন্য যায়গায়, পুরাতন ফোন কেনার সময় নানান জিনিস মাথায় রাখা দরকার, না হলে লাভ খুঁজতে গিয়ে হিতে বিপরীত হওয়ার সুযোগ ই বেশি। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা এমন কিছু জিনিস নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো পুরাতন ফোন কেনার সময় অবশ্যই আপনার মাথায় রাখা উচিৎ!
ক্লাসিফাইড ওয়েবসাইট গুলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ
পুরাতন ফোন বা যেকোনো পুরাতন জিনিস কেনার কথা মাথায় আসতেই চলে আসে ক্লাসিফাইড সাইট গুলোর কথা, মানে বাংলা ভাষায় বলতে বিক্রয় ডট কম এর নাম। আমি বিক্রয় ডট কমের মতো সাইট গুলো থেকে এড়িয়ে চলার জন্য পরামর্শ করবো। বিক্রয় ডট কম একদমই যে বেকার তা কিন্তু নয়, আপনি চাইলে সতর্কতার সাথে দেখে শুনে ফোন কিনতে পারেন, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আজকাল নানান ভাবে স্ক্যাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুরোনো ফোন কেনার সময় ক্লাসিফাইড সাইট গুলো হতে দূরে থাকুন
যদি বিক্রয় ডট কম থেকে ফোন কিনতেই হয়, তাহলে কিছু জিনিস মাথায় রাখবেন। অবশ্যই ফোনে কথা বলে কোন অ্যাডভান্স পেমেন্ট করবেন না। লোভনীয় ডিলস গুলো এড়িয়ে চলবেন, যেমন আমি দেখলাম ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো ২৫ হাজারে বিক্রি করছিলো। এই দামে এই ফোনের ডিসপ্লে পাওয়া যাবে না হয়তো, এগুলা পুরোই বাটপারি করার ধান্দা। দাম কম রেখে এরা মানুষ আকৃষ্ট করে, এদের ফোন কমে বেচার কিছু কমন ডায়লগ হচ্ছে, “টাকার খুব জরূরী দরকার, বিদেশ থেকে ফোনটি অনিয়েছি, অথবা ফোনটি বেচে আরেকটি নতুন ফোন কিনবো”।
অবশ্যই ক্যাশ অন ডেলিভারি তে রাজি হবেন এবং নিজের এলাকায় ডিল করবেন, অথবা এমন এলাকায় ডিল ফাইনাল করবেন, যেটা এটলিস্ট আপনার পরিচিত। না হলে মলম পার্টির তো কোন অভাব ই নাই। দেখা যাবে ফোন টাকা সবই খোয়াতে হবে। বিক্রয় ডট কম খারাপ না, আমি নিজেও এখানে অনেক ফোন বিক্রি করেছি, যারা কিনেছেন তারা কেউই ঠকেন নি।
ওয়ারেন্টি আছে এমন পুরোনো ফোন কেনার চেষ্টা করুন
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা যদিও একটু ট্রিকি, মানে এখানে আন-অফিসিয়াল ফোন বেশি জনপ্রিয়, যেগুলোর ওয়ারেন্টি ১ম দিন থেকেই নেই। সেক্ষেত্রে ফোনের সব কিছু যাচাই করে কেনা ভালো হবে। আর যেহেতু আপনি হয়তো পরিচিত কারো ফোনই কিনবেন সুতরাং আন-অফিসিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে ৮-১০ দিনের রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা সহ ডিল করা বেটার হবে। যদি ডিভাইসে কোন সমস্যা থাকে তাহলে এই সময়ের মধ্যে ধরা খেয়ে যাবে।
অফিসিয়াল ফোন কেনার ক্ষেত্রে এমন পুরাতন ফোন কেনার চেষ্টা করবেন যেটার ওয়ারেন্টি এখনো অটুট রয়েছে। ১ মাসের ওয়ারেন্টি বাকি থাকলেও যেন ওয়ারেন্টি থাকে, তাহলে সমস্যা হলে আপনি যেন ফ্রীতে ঠিক করাইতে পারেন। এখন যদিও সব ফোনের ওয়ারেন্টি অনলাইন সিস্টেমের সাথে সম্পর্ক যুক্ত, কিন্তু তারপরেও ফোন কেনার রশিদ বা আলাদা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফোনের সাথে নিয়ে নেবেন। এতে ওয়ারেন্টি ক্লেইম করতেও আপনার সুবিধা হবে না এবং আপনি জেনুইন ভাবে পারচেজও করতে পারলেন। অনেক সময় অনেক চোরাই ফোন অজান্তেই আমরা লোভনীয় ডিলে কিনে ফেলি, কিন্তু পরে নানান সমস্যার তৈরি হতে পারে।
তবে আজকাল ফেক রশিদ বানানো তো কোন ব্যাপার না, সহজেই জাল রশিদ আপনাকে গছিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে ফোনের বক্সের IMEI নাম্বারের সাথে ফোনের IMEI নাম্বার ম্যাচ করবেন, ফোনে *#06# ডায়াল করলেই ফোনের IMEI নাম্বার শো করবে। এখন ম্যাচিং IMEI বক্স সহ ফোন চুরি করা মুশকিল, যদিও এইটাও কোন ভাবে বাইপাস করা যেতে পারে, তাই আপনার ফোনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ফোনের ওয়ারেন্টি তথ্য যাচাই করে নিতে পারেন।
ওয়ারেন্টি আছে এমন পুরোনো ফোন কেনার চেষ্টা করুন
সব ব্র্যান্ড ফোনের ওয়ারেন্টি অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে চেক করা যায় না, তবে অনেক ব্র্যান্ডের হটলাইন নাম্বার রয়েছে সেখানে কল করে কিছু তথ্য শেয়ার করলে ওরা ওয়ারেন্টি তথ্য গুলো শেয়ার করে। তাছাড়া ব্র্যান্ড গুলোর ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট থেকেও আপনি এমন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। নিচে আমি কিছু ওয়েবাইট এবং কন্টাক্ট নাম্বার দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
শাওমি, রিডমি বা পকো ফোনের জন্য আপনি এই লিংক থেকে ফোনটি আসল কিনা সেটা যাচাই করতে পারবেন এবং +8809612-942664 হটলাইনে কল করে আপনি ওয়ারেন্টি মেয়াদ সম্পর্কিত তথ্য গুলো যাচাই করতে পারেন। স্যামসাং ফোনের তথ্য জানার জন্য সম্ভবত অনলাইন কোন সিস্টেম নেই, তবে থেকে থাকলে আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন, তাদের ওয়েবসাইটে থেকে এই নাম্বার টি পেলাম +88 09612 300 300, এখানে সরাসরি কল করে হয়তো ওয়ারেন্টি তথ্য পেতে পারেন।
অপো ফোনের জন্য সরাসরি এই লিংক ভিজিট করে ওয়ারেন্টি তথ্য অনলাইনে দেখতে পারবেন। ভিভো ফোনের জন্য এই লিংক এবং রিয়ালমি ফোনের ওয়ারেন্টি চেক করার জন্য এই লিংকে যাচাই করতে করবেন। ওয়ানপ্লাস যদিও বাংলদেশে ঐভাবে অফিশিয়ালি নেই, তারপরেও দেশে ওয়ানপ্লাস এর ফোন বেশ জনপ্রিয়, আপনি চাইলে এই লিংক থেকে ওদের সাথে চ্যাট করে ওয়ারেন্টি তথ্য জেনে নিতে পারেন।
এছাড়া বাংলাদেশে টেকনো, ইনফিনিক্স, বা আইটেল এর মতো কোম্পানি গুলো Carlcare নামক কোম্পানি থেকে আফটার-সেল সার্ভিস প্রোভাইড করিয়ে থাকে, এদের ওয়েবসাইট লিংক থেকে আপনি এই তিন ব্র্যান্ড এর ওয়ারেন্টি ইনফো পেতে পারবেন।
ফোনের বাইরে এবং ভেতরের সবকিছু চেক করে নিন
অবশ্যই আপনাকে পুরাতন ফোন ফিজিক্যাল ভাবে দেখে চেক করে তারপরেই কিনতে হবে। ফোন হাতে নিন, ফোনের কন্ডিশন চেক করুন, ভালো ভাবে ফোনের বডি এবং ডিসপ্লে সবকিচু চেক করে নিন, ফোনের মধ্যে পানি ঢুকেছে কিনা সেটা রিমুভেবল ব্যাটারি ওয়ালা ফোনে আগে চেক করা যেতো কিন্তু বর্তমানে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ওয়ালা ফোনে চেক করা যায় না, তবে দেখে নেবেন ফোনের ব্যাকপার্ট কোনভাবে খোলা বা ঢিলে হয়ে রয়েছে কিনা। ফোনের পেছনের গ্লাস খোলা হয়েছে বলে মনে হলে ডিল টি ব্রেক করায় ভালো হবে।
পুরাতন ফোনের বাইরে এবং ভেতরের সবকিছু চেক করে নিন
ফোনের বাইরের কন্ডিশন ঠিকঠাক থাকলে এবার এগোন ফোনের ইন্টারনাল সেন্সর, ব্যাটারি, ক্যামেরা, ডিসপ্লে, ভাইব্রেশন মটোর ইত্যাদি চেক করার দিকে। ফোনটি স্যামসাং এর হয়ে থাকলে আপনি সহজেই *#0*# কোডটি ডায়াল প্যাডে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে সকল সেন্সর গুলো চেক করে নিতে পারবেন। কিন্তু আলাদা ফোনের ক্ষেত্রে প্লে স্টোর থেকে সেন্সর টেস্ট করার অনেক অ্যাপ পেয়ে যাবেন, পছন্দ মতো যেকোনো অ্যাপ ডাউনলোড করে সহজেই সকল সেন্সর গুলো চেক করে নিতে পারবেন। বিশেষ করে ডিসপ্লে টেস্ট করে নেবেন, কোন ডেড পিক্সেল রয়েছে কিনা বা অ্যামোলেড ডিসপ্লে হলে বার্ন ইন সমস্যা রয়েছে কিনা ভালো ভাবে চেক করে নেবেন। এরপরে কল করে কল কোয়ালিটি, নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি, সাথে প্রক্সিমিটি সেন্সর কলিং এর সময় কেমন কাজ করছিলো এই বিষয় গুলো যাচাই করে নেবেন। আর হ্যাঁ, ফোনের চার্জার চার্জে লাগিয়ে টেস্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু। সাথে কিছুক্ষণ ধরে যেহেতু ফোনটি ব্যবহার করছেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাটারি ড্রেইনিং কেমন হচ্ছে সেটা লক্ষ করা হয়ে যাবে। অস্বাভাবিক ভাবে ব্যাটারি পারসেন্ট ড্রপ করছে কিনা সেটা খেয়াল করুন।
তো লং স্টোরি শর্ট, আপনি পুরাতন ফোন অনলাইন বা অফলাইন দুই যায়গা থেকেই কিনতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অফলাইন কে প্রথম প্রাধান্য তে রাখা উচিৎ। আপনি অনলাইন থেকেও কিনতে পারেন, সেক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত সাবধানতা অনুসরন করা বিশেষ জরুরী। সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার সময় বেসিক জিনিস গুলো চেক করে নেওয়া সর্বদা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাথে ওয়ারেন্টি এখনো লভ্য রয়েছে এমন ফোনের প্রতি ইন্টারেস্ট দেখানো বেটার। তারপরে সব সেন্সর, ডিসপ্লে, ব্যাটারি লাইফ চেক করে মানে ৩০-৪০ মিনিট ফোন ব্যবহার করার পরে ফ্যাক্টরি রিসেট করে আপনার সিম ঢুকিয়ে কল করে জাস্ট ডিল ফাইনাল করে ফেলতে পারেন যদি উপরের সব স্টেপ গুলো পাস হয়ে যায়।
ফোন যতো দামি, বিক্রি করার সময় ততো লস হয়, আর সেক্ষেত্রে পুরাতন ফোন কেনার সময় বা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার সময় বায়ার বেস্ট ডিল পায় প্রায় সর্বদা। আপনি ১৫ হাজার খরচ করে অনেক ভালো ক্যামেরা বা পারফর্মেন্স ওয়ালা ফোন কিনতে পারবেন, যদি চোখ কান খোলা রেখে ডিল করা যায়। আর হ্যাঁ, আমি এই আর্টিকেলে কোনো পয়েন্ট মিস করে থাকলে অবশ্যই সেটা কমেন্ট সেকশনে যুক্ত করবেন।
The post এই টিপস গুলো না জেনে পুরাতন ফোন কিনবেন না! appeared first on Trickbd.com.
0 মন্তব্যসমূহ