বিগত কয়েক বছর থেকে টুইটারের নিয়মিত ব্যবহারকারী সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমছে। বিশেষ যখন টুইটারের প্রতিটি ইউজারের ফিড ইলন মাস্কের শেয়ার করা মিমস দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। ভাবতেও অবাক লাগে কিভাবে এই লোক এতগুলো কোম্পানির প্রধান হয়েও সারাদিন এমন একের পর এক মিম শেয়ার দিতে থাকে। এত এনার্জি কোত্থেকে আসে?
টুইটার যখন ডুবতে বসেছে তখন আমাদের পুরোনো ফেসবুক বন্ধু মার্ক জাকারবার্গ চলে এলো একটি নতুন সোস্যাল মিডিয়া নিয়ে। জানি প্রথমেই আপনার মাথায় আসবে – আরেকটা সোস্যাল মিডিয়ার কি দরকার? ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম কি কাজে আছে তাহলে?
ইন্টারনেটের কি সত্যিই আরেকটা সোস্যাল মিডিয়ার প্রয়োজন? এটা যতটা টেকনোলজিক্যাল তার থেকে বেশি ফিলোস্যফিক্যাল প্রশ্ন। মেবি আজ সন্ধ্যায় শাওয়ারে আমি এটা নিয়ে বিস্তারিত চিন্তা করব।
বিশেষ করে কিছুদিন আগে পোস্ট পড়ার রেট লিমিট করার ঘোষনা ছিল টুইটারের কফিনে প্যারাক ঢোকানো। পৃথিবী যখন তাদের প্রিয় মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম একজন বিলিনিয়ার মিমারের কাছে হারাতে বসেছে, তখন মেটা তাদের নতুন সোস্যাল মিডিয়া লঞ্চ করার সিদ্ধান্ত নিল।
Threads মেটার নতুন মাইক্রোব্লগিং প্লার্টফর্ম। যেটা ব্যবহারকারীদের টেক্সট মিডিয়ামের মাধ্যমে এক্সপ্রেস করার স্বাধীনতা দিবে।
আজ সকালে আমি জাকারবার্গের পোস্ট দেখে টার্কিশ ব্ল্যাক কফি খেতে খেতে Threads এ নতুন একটি একাউন্ট তৈরী করে ফেললাম। কফিটা জঘন্য ছিল btw. ব্ল্যাক কফি আমার জন্য না।
UI & UX of Threads
Threads নিজেকে ইন্সটাগ্রামের কম্পেনিয়ন এপ হিসেবে দাবি করছে, তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এটি independent একটি প্লার্টফর্ম যার সাথে ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক বা মেটার অন্য কোনো এপের সংযোগ নেই। তবে আপনার অবশ্যই একটি ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট লাগবে Threads এ জয়েন করার জন্য।
Threads এর UI অনেকটাই ইন্সটাগ্রামের মতো। অপরদিকে ফাংসনালিটি অনেকটা টুইটারের মতো। ব্যবহার করার সময় আপনার মনে হবে ইন্সটাগ্রাম আর টুইটারের একটা ছোট্ট কিউট বাবু হয়েছে।
আপনার ইন্সটাগ্রামের ফলোয়ারদের Threads এ নিয়ে আসতে পারবেন (যদি তাদের Threads একাউন্ট থাকে আর কি)। টুইটারের মতোই রয়েছে reply আর quote অপশন।
রয়েছে বেশ কিছু প্রাইভেসি ফিচার যেমন প্রাইভেট প্রোফাইন, হিডেন ওয়ার্ডস, মিউট অপশন, লাইক হাইড করে রাখা আর ব্লকিং।
সব মিলিয়ে Threads নতুন হলেও ব্যবহারের সময় বেশ ম্যাচিউর বলে মনে হয়েছে। UX একটি টেক জায়েন্টের কাছ থেকে যেমনটা আশা করা যায় ঠিক তেমনই – flowless. সত্যি বলতে এটা হয়ত আমার ব্যবহার করা মেটার সবথেকে ক্লিন ডিজাইনড এপ।
Threads -এ আপাতত ফলো করার মত ব্যবহারকারীর সংখ্যা সীমিত। তবে দেশ ও দেশের বাইরের অনেক চেনা মুখ আমি দেখেছি। অর্থাৎ সবাই বেশ সাদরেই গ্রহন করছে।
টেক্সট বেসড সোস্যাল মিডিয়া
প্রশ্ন আসতে পারে ফটোগ্রাফি আর ভিডিওর যুগে কেন একটা টেক্সটবেসড প্লার্টফর্ম দরকার? টুইটার কি স্রেফ টেক্সট বেসড বা মাইক্রোব্লগিং সাইট বলেই ডুবতে বসেছিল না?
এই প্রশ্নটার উত্তর প্রত্যেকের কাছে ভিন্ন। কারো মতে মাইক্রোব্লগিং এর কোনো দরকার নেই, আর কারো কাছে মাইক্রোব্লগিং -ই হচ্ছে এক মাত্র সোস্যাল মিডিয়া।
তবে আমার মতে একটা টেক্সট বেসড সোস্যাল মিডিয়ার দরকার আছে। বিশেষ করে নিউজ ইন্ডাস্ট্রির জন্য। টুইটারের নিশ ছিল নিউজ ইন্ডাস্ট্রি। তবে ক্রমেই সেটা আমেরিকান-কেন্দ্রিক হতে শুরু করে। মাস্ক এই সুযোগে টুইটার কিনে একে নিস্ক্রিয় সোস্যাল মিডিয়া বানানোর একটা ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।
সত্যি বলতে রিলস / ভিডিও – বিহীন একটা সোস্যাল মিডিয়া পেয়ে আমি বেশ খুশি। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও আমার মতে এমন অনেক কিছুই আছে যেটা লিখে প্রকাশ করা যায়, রিলস বা ভিডিওতে নয়। লেখালেখির আলাদা একটা জগত আছে, যেটাতে প্রবেশের অন্যতম পথ হতে পারে Threads.
The Next Twitter?
Threads কি টুইটারের স্থান দখল করতে পারবে? নাকি টেকজায়েন্ট কোম্পানির আরেকটি Pet Project হিসেবে জন্মে অকাল মৃত্যুর শিকার হবে? সময় এইসব প্রশ্নের উত্তর বলে দিবে।
আপাতত আপনিও জয়েন হতে পারেন প্লে স্টোর থেকে Threads ইন্সটল করে। চাইলে আমাকে ফলো করতে পারেন, তবে প্লিজ জানতে চাইবেন না কেন ফলো করবেন।
শেষ করব জাকারবার্গের লেটেস্ট টুইট দিয়ে।
নিঃসন্দেহে খেলা জমে উঠেছে। দেখা যায় কোথার পানি কোথায় যায়।
The post চলে এলো Threads – নতুন মাইক্রোব্লগিং প্লার্টফর্ম appeared first on Trickbd.com.
0 মন্তব্যসমূহ