৮ হাজার শব্দে লিনাক্সের পরিচয় ও সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন

Ads Inside Post

৮ হাজার শব্দে লিনাক্সের পরিচয় ও সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি সবাই ভালো আছেন।লিনাক্স কী তা নিয়ে অনেকেরই ধারণা একটু অস্পষ্ট। তারপর লিনাক্স, গ্নু/লিনাক্স, কার্নেল, ডিস্ট্রো, উবুন্টু, লুবুন্টু, ফিডোরা এত এত শব্দ শুনলে কোনটা কী সব প্যাচিয়ে যায়। চলুন চেষ্টা করি, আজকে প্যাচ আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা। লেখাটা কিন্তু একটু বড়, পড়তে কিছুটা সময় প্রয়োজন।

লিনাক্স কী?

হয়ত আপনি শুনেছেন, লিনাক্স একটা অপারেটিং সিস্টেম।  কথাটা যে পুরোপুরি ভুল, তা নয়। আবার একদম ঠিকও নয়। এমনিতে লিনাক্স একটা কার্ণেল। তো এই কার্নেল আবার কী? এটা কি খাওয়া যায়? না, কার্নেল আসলে খাওয়ার জিনিস না, এটা একটি অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। কার্ণেলের কাজ হলো, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করা।

উইন্ডোজেরও একটা কার্নেল আছে, যার নাম NT, ম্যাক ওএসের কার্নেল হলো XNU। তবে এই কার্নেলগুলো ক্লোজড সোর্স। লিনাক্স কার্ণেলটি ওপেন সোর্স। ওপেন সোর্সের সুবিধা কি? ব্যাখ্যায় এখন না যাই, সহজ একটি উত্তর হলো, XNU আর NT অথবা Mac OS বা Windows এর উপর ভিত্তি করে কেউ নিজের একটা ওএস তৈরি করতে পারবে না। অ্যাপল আর উইন্ডোজ এগুলো নিজেদের আওতায় রেখে দিয়েছে। আর লিনাক্স? সবার জন্য উম্মুক্ত!

একটা কার্নেল তৈরি কিন্তু খুব সোজা বিষয় নয়! আর সেটাকে ওপেন সোর্স করে দেওয়া চমকপ্রদ ব্যাপার। তাই লিনাক্স কার্নেলের ওপর ভিত্তি করে অনেক অপারেটিং সিস্টেম গড়ে উঠেছে, যেমন, উবুন্টু, ফিডোরা, লিনাক্স মিন্ট, মানজারো প্রভৃতি। মজার একটা ব্যাপার হলো মাইক্রোসফট নিজেও লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করে তাদের Azure প্রজেক্টে, কারণ সেখানে NT কার্ণেল উপযুক্ত নয়। গুগলও তাদের ক্রোম ওএস, অ্যান্ড্রয়েড লিনাক্সে ভিত্তি করে তৈরি করেছে।

একটু আগে বলেছি, লিনাক্সকে অপারেটিং সিস্টেম বলাটা পুরোপুরি ভুল নয়। আসলে কথাটা হওয়া উচিৎ গ্নু/লিনাক্স। গ্নু হলো মুক্ত সফটওয়্যারের একটি সংগঠন, যার সাথে লিনাক্স গড়ে উঠেছে। গ্নু-র মাধ্যমেই মূলত ওপেন সোর্স লাইসেন্স জনপ্রিয় হয়েছে আর গ্নু/লিনাক্সকে বলা যায় গ্নু-র অপারেটিং সিস্টেম।

তো, শুধু লিনাক্স বললে লিনাক্স কার্নেল বোঝানো হয়, আর গ্নু/লিনাক্স বললে অপারেটিং সিস্টেম। তবে এত কঠিন শব্দ তো কেউ বলতে  চায় না, তাই অপারেটিং সিস্টেমকেও অনেক সময় শুধু লিনাক্স বলা হয়, আর এটা সাধারণ মানুষের জন্য বেশি বোধগম্য হয়। এই লেখাতেও আমরা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বোঝাতে অনেক সময়ই শুধু লিনাক্স ব্যবহার করব।

তবে লিনাক্সভিত্তিক সব ডিস্ট্রো কিন্তু গ্নু/লিনাক্সের অন্তর্গত না। যেমন, আমরা যে অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলো ব্যবহার করি, তারও মূলে রয়েছে লিনাক্স কার্নেল। তবে অ্যান্ড্রয়েড ঠিক বিশুদ্ধ লিনাক্স না। তারা লিনাক্স কার্নেলের একটি মডিফাইড ভার্সন ব্যবহার করে এবং গ্নু-র কম্পোনেন্টগুলো ব্যবহার করে না। তাই অ্যান্ড্রয়েডকে লিনাক্সভিত্তিক বলা যায়, তবে গ্নু/লিনাক্স বলা হয় না।

লিনাক্সের শুরুর কথা

ভালো কথা হলো এই অংশটুকু আমাকে আর লিখতে হচ্ছে না, কেননা আদনান কাইয়ুম ভাই অনেক আগেই বাংলা ভাষায় লিনাক্সের সংক্ষিপ্ত  চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন তার লেখনীতে, পেঙ্গুইনের পয়লা প্যাঁকপ্যাঁকানী। লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।

একটি পেঙ্গুইনীয় আখ্যান

Tux

দক্ষিণ মেরুতে পেঙ্গুইন থাকে, আর উত্তরে শুধু গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে পেঙ্গুইনের একটা প্রজাতি থাকে। কিন্তু আমরা যে পেঙ্গুইনের কথা বলছি সেটার বিচরণ পৃথিবীব্যাপী। এই পেঙ্গুইনটার একটা ছোট্ট সুন্দর নামও আছে, টাক্স।লিনুস টরভাল্ডস সাহেব একবার অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার National Zoo and Aquarium এ ঘুরতে গেছিলেন। আর তখন দৌঁড়ে এসে এক ছোট্ট পেঙ্গুইন দিলো তাকে কামড়ে! ব্যাস! তিনি ঠিক করে ফেললেন, পেঙ্গুইনই হবে লিনাক্সের মাস্কট। ল্যারি উইং এর ডিজাইন করে ফেললেন। জেমস হিউজ এর নাম দিলেন Tux, নামটা তার মাথায় এসেছে Torvalds UniX থেকে।

লিনাক্স ডিস্ট্রো ও ডিস্ট্রো ফ্যামিলি

গ্নু/লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম কথাটি অবশ্য শুধু একটি অপারেটিং সিস্টেমকে নির্দেশ করে না, লিনাক্স কার্নেলভিত্তিক অনেক অপারেটিং সিস্টেম আছে। তার কয়েকটির নাম আপনি শুনে থাকবেন। যেমন, ডেবিয়ান, উবুন্টু, লিনাক্স মিন্ট, রেডহ্যাট, ফিডোরা, আর্চ, মানজারো, সোলাস প্রভৃতি। এই অপারেটিং সিস্টেমগুলোর প্রতিটিকে বলা হয় লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বা সংক্ষেপে লিনাক্স ডিস্ট্রো।

মজার একটা বিষয় হলো লিনাক্সের ডিস্ট্রোগুলোও সাধারণত ওপেন সোর্স হয়ে থাকে, আর মডিফিকেশনের অনুমতি দেওয়া হয়। তাই দেখা যায় একটি ডিস্ট্রোর ওপর ভিত্তি করে আরো ডিস্ট্রো গড়ে ওঠে। যেমন ধরা যাক, ডেবিয়ান একটি স্বাধীনভাবে গড়ে ওঠা লিনাক্স ডিস্ট্রো, আবার ডেবিয়ানকে আরো সহজ এবং আরো ফাংশনালিটি যুক্ত করে গড়ে উঠেছে উবুন্টু। এরকম আরো কিছু ডেবিয়ানভিত্তিক ডিস্ট্রো আছে, যেমন ডিপিন, এমএক্স লিনাক্স, উবুন্টুসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় ডিস্ট্রো।

এদের মধ্যে ডেস্কটপ জগতে উবুন্টু বিশেষভাবে জনপ্রিয়। উবুন্টুকে ডেবিয়ান থেকে আরো সহজ, ব্যবহারবান্ধব ও ফাংশনাল করা হয়েছে। উবুন্টুভিত্তিক ডিস্ট্রোর তালিকাটাও অনেক বড়। এর মধ্যে লিনাক্স মিন্ট, পপ ওএস, জরিন ওএস, এলিমেন্টরি ওএস প্রভৃতি পরিচিত নামগুলো অন্তর্ভুক্ত। লিনাক্স মিন্টের অবশ্য একটি বিশেষ সংস্করণ আছে যেটি সরাসরি ডেবিয়ানভিত্তিক, লিনাক্স মিন্ট ডেবিয়ান এডিশন।

তো, একটি ডিস্ট্রো, তার উপর ভিত্তি করে তৈরি ডিস্ট্রো, আবার সেগুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি ডিস্ট্রো (চলতে থাকবে) সবগুলো একত্রে ডিস্ট্রো ফ্যামিলি বা পরিবার। অর্থাৎ, উবুন্টু, মিন্ট, পপ, জরিন, এলিমেন্টরি সবাই উবুন্টু পরিবারের সদস্য এবং এগুলোসহ ডিপিন, এমএক্স লিনাক্স, লিনাক্স মিন্ট ডেবিয়ান এডিশন প্রভৃতি নিয়ে ডেবিয়ান পরিবার। একইভাবে আর্চ ফ্যামিলিতে আছে আর্চ, ম্যাঞ্জারো, ম্যাগপাই, এন্টার্গওস প্রভৃতি। রেডহ্যাট ফ্যামিলিতে সেন্টওএস, ফিডোরা প্রভৃতি।

রেডহ্যাট ও ডেবিয়ানের ফাইল ফর্মেট .rpm ও .deb বলে প্রায়সই এদের ফ্যামিলির ডিস্ট্রোগুলোকে RPM-ভিত্তিক বা Deb-ভিত্তিক হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। আর্চের প্যাকেজ ম্যানেজার Pacman বলে আর্চ ফ্যামিলিকে কখনো কখনো Pacman-ভিত্তিক হিসেবে বলা হয়। ডেবিয়ান, রেডহ্যাট ও আর্চ পরিবারের বাইরেও অনেক লিনাক্স ডিস্ট্রো আছে, যেমন, সোলাস, স্ল্যাকওয়্যার, জেন্টু প্রভৃতি।

এখন একটা ছবি দেখাই, একটু ভয় ভয় লাগতে পারে কিন্তু! ছবিটিতে ক্লিক করে উইকিমিডিয়া থেকে বড় আকারে দেখা যাবে। সেখান থেকে কোন ডিস্ট্রোর নামে ক্লিক করলে ডিস্ট্রোটির ওয়েবসাইটে ঘুরে আসতে পারেন।

ক্রেডিট: Andreas Lundqvist (initially), Muhammad Herdiansyah (continued), Fabio Loli (continued) – http://futurist.se/gldt/ (initially), https://github.com/konimex/linuxtimeline (continued), https://github.com/FabioLolix/LinuxTimeline (continued), GFDL 1.3, Link

হ্যাঁ, এই ছবিতে লিনাক্স ২০১৯ সাল পর্যন্ত লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলো কোনটি কখন কীভাবে এসেছে তার তালিকা দেখানো হয়েছে। অবশ্যি এই চমকপ্রদ তালিকা সত্ত্বেও এর বাইরেও কিন্তু আরো লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন আছে। কেননা, যথেষ্ট পারদর্শিতা থাকলে প্রত্যেকেরই সুযোগ আছে কার্নেল থেকে অথবা অন্য কোন ডিস্ট্রোর ওপর ভিত্তি করে নিজের একটি ডিস্ট্রো গড়ে তোলার।

সবার জন্য লিনাক্স

লিনাক্স ডিস্ট্রো কিন্তু অনেক, এবং বিভিন্ন ডিস্ট্রোর আলাদা আলাদা উপযোগিতা আছে। এরকম কেউ কেউ আছে, যারা লিনাক্স বলতে শুধু কালি লিনাক্সের কথা জানে। অর্থাৎ, চিন্তাটা এরকম, লিনাক্স হ্যাকাররা ব্যবহার করে। কালি লিনাক্স আসলে একটি পেনিট্রেশন টেস্টিং (অনুপ্রবেশ যাচাইকারী) ডিস্ট্রো, যেটি নিরাপত্তা বা সিক্যুরিটি রক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার হয়, এবং একারণে, এটি হ্যাকিং জাতীয় কাজের ক্ষেত্রেও জনপ্রিয়।

আবার আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে, Gentoo, এটাতে সহজ কোন ইন্সটলার দেওয়া থাকে না। ম্যানুয়ালি পিসিতে ইন্সটল করতেই কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। আবার কোন ডিস্ট্রো হয়ত সার্ভারের জন্য তৈরি, কোনটি হয়ত এক্সপার্টদের জন্য বেশি উপযুক্ত। আসলে মোটামুটি সবধরণের অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজনই লিনাক্স মেটাতে পারে, কেননা, লিনাক্স সুবিধা দেয় প্রয়োজনমত পরিবর্তন করে নেওয়ার।

তো, এরকম ডিস্ট্রো যদি আমার মত কোন সাধারণ ব্যবহারকারীকে ধরিয়ে দেওয়া হয়, তাদের স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগার কথা নয়। কারণ এগুলো জনসাধারণের জন্য বানানো হয়নি। যেখানে আমরা নেট ব্রাউজিং করতে পারবো, অডিও ভিডিও প্লে করতে পারবো, অফিস অ্যাপ্লিকেশনে কাজ করতে পারবো, আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারবো, এরকম কিছু। এরকম সুন্দর কিছু ওএসের মধ্যে রয়েছে মিন্ট, উবুন্টু, ডিপিন, এলিমেন্টরী, ম্যাঞ্জারো, ম্যাগপাই, এমএক্স, সোলাস প্রভৃতি।

অবশ্য এখন পর্যন্ত একটু প্রফেশনাল জগতেই লিনাক্সের পদচারণা সবচেয়ে বেশি। একটা চমকপ্রদ ব্যাপার হলো TOP500 এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমান সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ৫০০টি সুপার কম্পিউটারের সবগুলোই লিনাক্স ব্যবহার করে। আগে এই জগতে ইউনিক্স জনপ্রিয় ছিলো, কিন্তু এখন ইউনিক্স একটিও নেই। আবার সার্ভারের জগতেও লিনাক্সের শক্ত দখল, যেমন, হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন, হোস্টিংয়ের মধ্যে লিনাক্স হোস্টিং বেশি প্রচলিত।

তাহলে ডেস্কটপে কি লিনাক্স ব্যবহারকারী নেই? অবশ্যই আছে। NetMarketShare সাম্প্রতিক সময়ের হিসেবে ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৩% এর আশেপাশে। সংখ্যাটা হয়ত খুব বেশি মনে হচ্ছে না, কিন্তু একদম কম নয় কিন্তু, প্রতি প্রায় ৩০ জনে ১ জন। এখানে একটা বিষয় আছে, অনেকেই পিসিতে উইন্ডোজ ও লিনাক্স দুটো একসাথে ইন্সটল রেখে থাকেন, তাই প্রকৃত সংখ্যাটা আরো কিছুটা বেশি হতে পারে।

তবে যারা ডেভেলোপমেন্ট সংশ্লিষ্ট কাজ করেন, তাদের মধ্যে লিনাক্স ব্যবহারের প্রবণতা অনেক বেশি। Stack Overflow ডেভেলোপার সার্ভে ২০২০ অনুযায়ী, সার্ভেতে অংশ নেওয়া ৫৩,৮৪৩ জনের ৫৫% লিনাক্স প্লাটফর্ম ব্যবহার করেন, ৫৩.১% উইন্ডোজ এবং ২৪% ম্যাক ওএস। প্রসঙ্গত এখানে ১০০% মিলবে না, যেহেতু অনেকেই একাধিক প্লাটফর্ম ব্যবহারকারী রয়েছেন।

লিনাক্স ফোন

স্মার্টফোনের জগতে অ্যান্ড্রয়েডের কথা তো বলাই হলো। অবশ্য বিশুদ্ধ লিনাক্স ফোন এখনো জনপ্রিয়তা পায়নি, অথবা বলা যায় এটি কেবল সূচনালগ্নে আছে। এখন পর্যন্ত তবে বেশ কিছু প্রজেক্ট চলমান রয়েছে লিনাক্স ফোন নিয়ে। এর মধ্যে Pine64 কোম্পানির পাইনফোনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যেটি $150 (2/16) ও $200 (3/32) দামে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও সফটওয়্যারের দিক দিয়ে এখনো দৈনন্দিন ব্যবহারে অ্যান্ড্রয়েডের মত উপযুক্ত হয়নি।

বিশুদ্ধ লিনাক্স ফোনের বেশ কিছু এডভান্টেজ আছে। আপনি পছন্দমত অপারেটিং সিস্টেম, যেমন- উবুন্টু টাচ (ইউবিপোর্টস), প্লাজমা মোবাইল, ডেবিয়ান ফশ, মানজারো, পোস্টমার্কেট ওএস প্রভৃতি ব্যবহার করতে পারবেন। উল্লেখ্য এখনো এরা ডেভেলোপমেন্ট পর্যায়ে আছে। লিনাক্সের অন্য যত সুবিধা আছে, যা পরে আলোচনা করা হয়েছে, তার অধিকাংশ লিনাক্স ফোনেও প্রযোজ্য, পিসি-স্মার্টফোনে প্রায় এক ধরণের এক্সপেরিয়েন্স।

অ্যান্ড্রয়েডে কিন্তু এমন হয় না, সর্বোচ্চ দু-তিন বছর আপডেট দেওয়া হয়, কিছু ডিভাইসে তো দেওয়াই হয় না। আইফোনে কিছুটা বেশি দেওয়া হয়, কিন্তু লিনাক্স ফোনে যতদিন অপারেটিং সিস্টেমটি একটিভ থাকছে, আপনি আপডেট পাচ্ছেন, আবার কোন একটি অপারেটিং সিস্টেম যদি ডেভেলোপমেন্ট বন্ধও হয়ে যায়, হাতে আরো অপশন থাকছে। বলতে গেলে বিশেষ কোন ঘটনা না হলে লাইফটাইম আপডেট পাচ্ছেন।

ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট

সহজ ভাষায় ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট, সংক্ষেপে ডিই (DE) হলো আপনার ডেস্কটপের চেহারা। অনেক ডিস্ট্রোই বাই ডিফল্ট একাধিক ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট অফার করে। আবার নিজের পছন্দমত ডিই ইন্সটল করে নেওয়ার সুযোগও রয়েছে। লিনাক্সের অভিজ্ঞতার একটা বড় অংশ ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট নির্ধারণ করে দেয়।

একটা উদাহরণ দিই, উবুন্টু বেশকিছু ডেস্কটপ ইন্টারফেসে পাওয়া যায়। তাদের মূল এডিশনটিতে গ্নোম ডিই ব্যবহার হয়েছে। অন্য এডিশনগুলোর মধ্যে আছে কুবুন্টু, লুবুন্টু, জুবুন্টু, উবুন্টু মাতে, উবুন্টু বাজ্বি। উবুন্টুর ক্ষেত্রে এদেরকে উবুন্টু ফ্লেভার বলা হয়। যথাক্রমে এই ফ্লেভারগুলো গ্নোম, কেডিই, এলএক্সকিউট, এক্সএফসিই, মাতে ও বাজ্বি ডেস্কটপ ব্যবহার করে।

এটা কিন্তু মোটেও থিমের মত কিছু নয়। বরং ডেস্কটপের লুক, এনিমেশন, ইউটিলিটিস, রিসোর্স ইউসেজসহ অনেক বিষয়ে এনভায়রনমেন্টভেদে পরিবর্তন আসে। আবার ডিইগুলোও সাধারণত বেশ কাস্টমাইজেবল হয়ে থাকে। থিম, আইকন থিম, ডক বা প্যানেল প্রভৃতি কাস্টমাইজের সুযোগ থাকে।

তবে অবশ্যই যে ডিই-ই ব্যবহার করুন না কেন, একই ডিস্ট্রোর সব ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট এডিশনের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন, উবুন্টুর সব অফিশিয়াল ফ্লেভারই ক্যানোনিকাল ডেভেলোপ করে, একইসাথে রিলিজ হয়, একইভাবে সফটওয়্যার ইন্সটল করা যায়, একই রিপোজিটরী ব্যবহার হয়, একইভাবে আপডেট দেওয়া হয় প্রভৃতি।

আবার ভিন্ন ডিস্ট্রোতে এক ডিই ব্যবহার করলেই তারা এক হয়ে যায় না। ফাংশনালিটি ও ফিচারে যথেষ্ট পার্থক্য থাকে। সহজভাবে বললে, ডিই পরিবর্তন করলে বাহিরটা পরির্তন হয়, ভেতরটা ঠিক থাকে।

আমি উবুন্টুর উদাহরণ দিয়ে বুঝাচ্ছিলাম। অন্য ডিস্ট্রোর ক্ষেত্রেও অনেকেই একাধিক ডিই অফার করে। লিনাক্স মিন্ট তিনটি ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টে পাওয়া যায়, সিনামন, এক্সএফসিই ও মাতে। মানজারো তো আরো বেশি এনভায়রনমেন্ট পাওয়া যায়, গ্নোম, কেডিই, এক্সএফসিই, বাজ্বি, সিনামন, এলএক্সডিই, এলএক্সকিউট, মাতে। ফিডোরার বেলায় মূল এনভায়রনমেন্ট গ্নোম, অন্য এডিশনগুলোকে ফিডোরা স্পিনস বলা হয়, এর মধ্যে কেডিই, এক্সএফসিই, মাতে কম্পিজ, সিনামন, এলএক্সডিই, এলএক্সকিউট, এসওএএস প্রভৃতি আছে।

আবার কিছু ডিস্ট্রো শুধু একটি এনভায়রনমেন্টই অফার করে। যেমন, পপ ওএস গ্নোম ডেস্কটপ, ডিপিনে ডিপিন ডেস্কটপ, এলিমেন্টরীতে প্যানথীয়ন ডেস্কটপ। তবে মজার ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেকোন ডিস্ট্রোতেই যেকোন ডিই ইন্সটল করা যায়, এমনকি একসাথে একাধিক ডিই ইন্সটল রেখে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নটি ব্যবহার করারও সুযোগ আছে।

যদিও সাধারণত এভাবে অন্য ডিই ইন্সটল করার পরামর্শ দেওয়া হয় না, কারণ এতে কম্বিনেশন সবসময় খুব ভালো হয় না। আবার দেখা যায় বিভিন্ন ইউটিলিটি যেমন ফাইল ম্যানেজার, সেটিংস একাধিক হয়ে যায়। তাছাড়া অন্য সমস্যাও হতে পারে।

সারসংক্ষেপ

লিনাক্স একটি কার্নেল। গ্নু/লিনাক্স হলো লিনাক্স কার্নেল+অন্যান্য গ্নু কম্পোনেন্ট নিয়ে তৈরি অপারেটিং সিস্টেম, যাকে লিনাক্সও বলা হয়। এক একটি অপারেটিং সিস্টেমকে বলা হয় লিনাক্স ডিস্ট্রো। একটি লিনাক্স ডিস্ট্রো ও তার থেকে আসা সব লিনাক্স ডিস্ট্রো মিলে ডিস্ট্রো ফ্যামিলি। সব লিনাক্স ডিস্ট্রো (যেমন- অ্যান্ড্রয়েড) গ্নু/লিনাক্স নয়। গ্নু/লিনাক্সে ডিস্ট্রোর ইউজার ইন্টারফেস পরিবর্তনযোগ্য, ইন্টারফেসকে বলা হয় ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট।

উইন্ডো ম্যানেজার

উইন্ডো ম্যানেজার এলিমেন্টগুলোর পজিশন ও অ্যাপিয়ারেন্স ঠিক করে। উইন্ডো ম্যানেজার ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট একটি অংশ হতে পারে আবার ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টের পরিবর্তে এককভাবেও ব্যবহৃত হতে পারে। ডেস্কটপ ইন্টারফেসে এর সাথে আরো ফাংশন ও রঙের ছোঁয়া যোগ হয়।

উইন্ডো ম্যানেজারে কীবোর্ডের ব্যবহার বেশি। এখানে প্রচুর শর্টকাট আছে যা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে ইফিশিয়েন্সি পাওয়া যায়। i3, awesome, bspwm, openbox সহ বেশ কিছু উইন্ডো ম্যানেজার রয়েছে। এগুলো টাইলিং, অর্থাৎ, উইন্ডোগুলোকে টাইলের মত সাজিয়ে রাখার সুবিধা দেয়। এরকম বিভিন্ন কারণে একটু গীক লেভেলের কেউ কেউ রঙচঙে ডিই ব্যবহার না করে উইন্ডো ম্যানেজার ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।

অবশ্যি, আমার মত সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উইন্ডো ম্যানেজার উপযুক্ত নয়, কারণ এর জন্য দক্ষতা প্রয়োজন। আমাদের জন্য ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টগুলোই সুন্দর, নয় কি?

কেন লিনাক্স?

১. লিনাক্স সাধারণত ফ্রি

লিনাক্স ব্যবহারের বেশ কিছু কারণ নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই ধারণা পেয়েছি। যেমন, লিনাক্স সাধারণত বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং শুধু তা-ই নয়, একইসাথে আছে সংযোজন, সংস্কার ও বিতরণের স্বাধীনতা, যাকে বলা যায় FOSS (Free and Open Source Software)। অবশ্য, এখানে ফ্রি মানে মুক্ত, সবসময়ই যে বিনামূল্য এমন নয়। এই যেমন, জরিন ওএসের কোর ভার্সনটি ফ্রি, কিন্তু আল্টিমেট ভার্সনটি কিনতে হয়। আবার Fedora ফ্রি, কিন্তু এর আপস্ট্রিম Red Hat লিনাক্স কমার্শিয়াল (তবে দুটোই ওপেনসোর্স)।

২. ফ্রি সফটওয়্যার

লিনাক্সের জগতে সফটওয়্যারের ক্ষেত্রেও ফ্রি ও ওপেন সোর্সের প্রাচুর্য। এমন কিছু চমৎকার অ্যাপস আছে, যা কেবল লিনাক্সের জন্য অ্যাভেইলেবল। যেমন, GParted (পার্টিশন এডিটর), Geary (ইমেইল ক্লায়েন্ট), Kalzium (পর্যায় সারণি), Kazam (স্ক্রিন রেকর্ডার), Okular (পিডিএফ ভিউয়ার), Celluloid (ভিডিও প্লেয়ার) প্রভৃতি।

আবার কয়েকটি ডিস্ট্রো-স্পেসিফিক, অর্থাৎ শুধু নির্দিষ্ট ডিস্ট্রোর জন্য অ্যাপস রয়েছে। যেমন এলিমেন্টরীর অ্যাপ সেন্টারে কিছু অ্যাপ রয়েছে, যা উইন্ডোজ এমনকি অন্য লিনাক্সেও এভেইলেবল নয়। এন্ডলেস ওএসে কিছু দুর্দান্ত লার্নিং অ্যাপস রয়েছে, যা শুধু সেখানে এক্সক্লুসিভ।

৩. পছন্দ

যেহেতু অনেক ডিস্ট্রো আছে, যাদের আলাদা ফোকাস, পলিসি, ইউজার বেজ, সুবিধা-অসুবিধা আছে, আপনার পছন্দমত উপযুক্ত একটি খুঁজে নিতে পারেন। যেমন, উবুন্টু প্রায় সবধরণের ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি, ডেস্কটপের পাশাপাশি আইওটি, সার্ভার, ক্লাউড, রাস্পবেরী পাইয়ের জন্যও উবুন্টু আছে। পপ ওএস (Pop!_OS) বিশেষভাবে ডেভেলোপারদের জন্য তৈরি। এর ওয়ার্কফ্লো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন মাল্টিটাস্কিং ইফিশিয়েন্ট ও কীবোর্ড ন্যাভিগেশন সুবিধাজনক হয়। আবার নতুন ব্যবহারকারীরা যেন সহজেই লিনাক্সে অভ্যস্থ হতে পারে এজন্য লিনাক্স মিন্ট ও জরিন ওএস বিশেষায়িত। আর্চ লিনাক্স তাদের জন্য উপযুক্ত যারা ভালোরকম দক্ষ এবং সবকিছু নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে পছন্দ করেন। ডিপিন বা এলিমেন্টরি ওএস তাদের জন্য যারা খুব সুন্দর একটি ডেস্কটপ চাইছেন।

৪. কাস্টমাইজেশন

কাস্টমাইজেশনের বহুরকমের সুযোগ থাকছে। ওয়ালপেপার থেকে শুরু করে কার্নেল ভার্সন পর্যন্ত পরিবর্তনযোগ্য। আপনি প্রকৃত এডমিনিস্ট্রেশন বা রুট একসেস পাচ্ছেন। সবকিছুই নিজের মত গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে।

৫. লাইটওয়েট

আরেকটি ব্যাপার হলো, লিনাক্স ডেস্কটপগুলোর বড় অংশ বেশ লাইটওয়েট। পুরনো পিসি, যেখানে উইন্ডোজের নতুন ভার্সনগুলো ভালোভাবে সমর্থিত নয়, হয়ত এই সময়ে এসেও XP ব্যবহার করতে হচ্ছে, এমন পিসিতেও লিনাক্স ব্যবহার করে নতুন সজীবতা আনতে পারেন।

৬. প্রোডাকশন ফ্রেন্ডলি

একটু আগে যে পরিসংখ্যানগুলো উল্লেখ করেছিলাম, নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন ডেভেলোপারদের মধ্যে লিনাক্স ব্যবহারের প্রবণতা তুলনামূলক অনেক বেশি। ডেভেলোপারদের জন্য লিনাক্স ব্যবহারে বিশেষ সুবিধা আছে। আর আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবো না, লিনাক্স ব্যবহার করলে কম্পিউটার রিলেটেড আরো শেখার একটা আগ্রহ তৈরি হয়।

৭. নিরাপত্তা

আর নিরাপত্তা ও প্রাইভেসির কথা না বললেই নয়, এদিক দিয়ে লিনাক্স অনেক নিরাপদ। একটা ধারণা প্রচলিত আছে, লিনাক্সে কোন ভাইরাস নেই। আসলে বিষয়টি সেরকম নয়, লিনাক্সও ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, তবে সেটার সম্ভাবনা খুবই কম। এখানে সফটওয়্যার ইন্সটল, ইউএসবি ডিভাইস ব্যবহার নিয়ে ভয়ে থাকতে হয়না।

৮. সফটওয়্যার প্রাপ্তি

লিনাক্সের সফটওয়্যার ইন্সটল করা খুবই সহজ। গুগলে যেয়ে খুঁজে ডাউনলোড করতে হবে না, ডাউনলোড করতে গিয়ে সফটওয়্যারের বদলে ভাইরাস ডাউনলোডেরও ভয় নেই। বেশিরভাগ সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে শুধু সফটওয়্যার ম্যানেজারে যাবেন, সার্চ করবেন বা ক্যাটাগরীতে খুঁজে নিবেন, ইন্সটল বাটনে ক্লিক করবেন, পাসওয়ার্ড দিবেন। ডাউনলোড-ইন্সটল দুটোই একসাথে হয়ে যাবে। যদিও পার্থক্য আছে অনেক, অনেকটা অ্যান্ড্রয়েডে প্লে-স্টোর থেকে ইন্সটলের মত।

৯. কমিউনিটি

লিনাক্সে কমিউনিটিও খুব চমৎকার। কোন সমস্যায় পড়লে সম্ভবত অনলাইনে সার্চ করলে সমাধান পেয়ে যাবেন, অথবা না পেলে বিভিন্ন লিনাক্স ফোরামের সহায়তা নিতে পারেন। যেমন, LinuxQuestions.org, LINUX.ORG Forums প্রভৃতি। ডিস্ট্রোগুলোরও প্রায়স নিজেদের ফোরাম থাকে।

বাংলা ভাষায়ও আগে চমৎকার একটি ফোরাম ছিলো, লিনাক্স বাংলাদেশ ফোরাম, তবে বর্তমানে তা ডাউন। তবে চমৎকার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, টেলিগ্রাম বা মেসেঞ্জারে লিনাক্সের বিভিন্ন একটিভ গ্রুপ রয়েছে, যারা লিনাক্সে পথচলায় সহায়ক হতে পারে। যেমন, লিনাক্স বাংলাদেশ, পেঙ্গুইনের দল, উবুন্টু বাংলাদেশ প্রভৃতি।

১০. টার্মিনাল

এটা হলো লিনাক্স চালানোর আসল মজা। টার্মিনালের কালো পর্দায় যে কী কী করা যায়, সে এক বিস্ময় বটে। এমন কিন্তু না যে, লিনাক্স চালাতে হলে টার্মিনাল ব্যবহার করতেই হবে, তবে লিনাক্সের মজাটাই ওখানে। যদি টার্মিনালকে ভয়ঙ্কর কিছু ভেবে থাকেন, তাহলে এটা দেখুন: কালো পর্দার জাদু: টার্মিনালের মজার কিছু কমান্ড

লিনাক্সের অসুবিধা

অবশ্যই আমি বলি না লিনাক্স পারফেক্ট কোন কিছু। বিশেষ করে আমরা যখন জীবনের শুরু থেকেই উইন্ডোজের সাথে পরিচিত, একটা নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া প্রথমে একটু তো কঠিনই। নতুন ইউআই ও ব্যবহারবিধি বুঝে উঠতে একটু সময় লাগে স্বাভাবিকভাবেই।

লিনাক্সে নবাগতদের অনেকে প্রথমেই যে বড় সমস্যায় পড়েন, তা হলো উইন্ডোজে অনেক পরিচিত কিছু সফটওয়্যার লিনাক্সে সমর্থিত নয়। জনপ্রিয় অধিকাংশ সফটওয়্যার, যেমন, ফায়ারফক্স, ক্রোম, ভিএলসি, জুম, কোডব্লকস, অ্যাটম প্রভৃতি লিনাক্সেও পেয়ে যাবেন। তবে সমর্থিত নয় এমন দুটো নাম সবচেয়ে বেশি আসে, তা হলো এডোবি ও মাইক্রোসফট অফিস।

এডোবি পণ্য কিংবা মাইক্রোসফট অফিসের পরিবর্তে লিনাক্সে জনপ্রিয় GIMP (ফটো এডিটর), Inkscape (ভেক্টর গ্রাফিক্স এডিটর), Krita (ফটো এডিটর+ডিজিটাল ড্রইং), Kdenlive (ভিডিও এডিটর), Scribus (পাবলিশিং সফটওয়্যার), LibreOffice, WPS Office, Only Office প্রভৃতি। ফ্রি অর্থ কিন্তু এই নয় যে এই সফটওয়্যারগুলো কম ফাংশনাল। উইন্ডোজেও এগুলো ব্যবহার করে দেখে নিতে পারেন।

অনেক সময় হার্ডওয়্যার সাপোর্ট নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। AMD-এর নতুন হার্ডওয়্যারগুলোর ক্ষেত্রে Linux Kernel 5.8-এ আপগ্রেড করে নিলে সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা, Nvidia-র ক্ষেত্রে কিছু প্রপ্রাইটরী ড্রাইভার প্রয়োজন হয়, যা সাধারণত আইএসও ডাউনলোডের সময় বা ইন্সটলের সময় অফার করা হয়। অথবা ইন্সটলের পরেও তা যুক্ত করে নিতে পারেন।

তাছাড়া, ডিস্ট্রোভেদে বিভিন্নরকম টুকটাক সমস্যা বা বাগ-ভাল্লুকের দেখা পাওয়া যেতেই পারে, খুবই স্বাভাবিক। যেকোন সমস্যা হলে কোন লিনাক্স ফোরাম বা সাপোর্ট গ্রুপে পোস্ট দিলে সমাধান ইন শা আল্লাহ পেয়ে যাবেন।

রিলিজ শিডিউল

সাধারণত দেখা যায় ডিস্ট্রোগুলো একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে রিলিজ করা হয়। কিছু ডিস্ট্রো খুবই স্ট্রিক্টলি এই নিয়ম মেনে চলে। যেমন উবুন্টু প্রতি ৬ মাস অন্তর একটি করে নতুন রিলিজ আনে আর প্রতি ২ বছর অন্তর একটি করে এলটিএস রিলিজ। আবার আর্চ দেখা যায় ক্রমাগত আপগ্রেড করতেই থাকে।

মোটাদাগে, আমরা দুই ভাগে রিলিজ শিডিউলকে ভাগ করতে পারি। পয়েন্ট রিলিজ এবং রোলিং রিলিজ।

১. ফিক্সড রিলিজ/পয়েন্ট রিলিজ: একটা সময় পরপর নতুন মেজর রিলিজ হয়, যাতে বেশ বড় ধরণের পরিবর্তন আসে। আর নিয়মিত ছোটখাট ওএস আপডেট, সফটওয়্যার আপডেট, বাগ ফিক্স, সিকিউরিটি প্যাচ এসব আসে। উবুন্টু একটি পয়েন্ট রিলিজ ডিস্ট্রো।

২. রোলিং রিলিজ: নিয়মিত আপডেট হতে থাকে। যেকোন সফটওয়্যার নতুন ভার্সন রিলিজের প্রায় সাথে সাথে আপডেট চলে আসে। যদি ভালো গতির কানেকশন না থাকে, আপডেটগুলো ইন্সটল করা সময়সাপেক্ষ হবে। আর্চ একটি রোলিং রিলিজ ডিস্ট্রো।

এলটিএস: পয়েন্ট রিলিজের একটি বিশেষ ধরণ রয়েছে, যাকে বলা হয় এলটিএস বা লং টার্ম সাপোর্ট। এই ভার্সনগুলোতে সাধারণ রিলিজের চেয়ে বেশিদিন সাপোর্ট ও আপডেট দেওয়া হয়। যেমন, উবুন্টু সাধারণ রিলিজগুলোতে ৯ মাস করে বাগ ফিক্স, আপডেট ও সাপোর্ট দেয়, তবে এলটিএস ভার্সনগুলোতে ৫ বছর সাপোর্ট দেওয়া হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে এক্সটেন্ডেড মেনটেইনেন্স (এন্টারপ্রাইজ ব্যবহারে পেইড/পার্সোনাল ব্যবহারে ফ্রি) অফার করা হয়।

অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রোডাক্টিভ কাজ বা অফিসিয়াল কাজে কিছুদিন পরপর ওএস আপগ্রেড করা অনেক ঝক্কির ব্যাপার। এখনো দেখা যায় কিছু অফিসে XP বা 7 ব্যবহার হচ্ছে। এরকম ক্ষেত্রে এলটিএস ভার্সনগুলো কাজে আসে।

ডিস্ট্রো পরিচিতি

ডিস্ট্রো তো অনেক আছে, আমরা অল্প কয়েকটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি। সাধারণভাবে, উবুন্টুভিত্তিক ডিস্ট্রোগুলো নতুন অবস্থায় সুবিধাজনক, কেননা এর কমিউনিটি সাপোর্ট সমৃদ্ধ এবং স্ট্যাবিলিটি বেশ ভালো। এছাড়া মানজারো-ও মন্দ নয়।

উবুন্টু (Ubuntu)

২০০৪ সালে উবুন্টুর যাত্রা যখন শুরু হয়, তখনো ডেস্কটপের জগতে লিনাক্স প্রায় অচেনা। সার্ভার বা সুপার কম্পিউটারের অতি প্রফেশনাল জগতেই লিনাক্সের ঘোরাফেরা। সেখান থেকে ডেস্কটপে লিনাক্সকে সহজলভ্য করার জন্য উবুন্টুর অবদান অনেক বেশি। প্রাচীন আফ্রিকান শব্দ উবুন্টু (oǒ’boǒntoō)-র অর্থটা বেশ চমৎকার, ‘Humanity to Others’, বাকিদের জন্য মানবতা। এর আরেকটা অর্থ আছে, I am what I am because of who we all are, সকলের জন্যই আমি আমার মত।

উবুন্টু ডেবিয়ান পরিবারের সদস্য। ডেবিয়ান নিজে অবশ্য একটু কাঠখোট্টা ধরণের। তবে উবুন্টু খুবই সহজে ব্যবহারযোগ্য ও সুন্দর একটি ডিস্ট্রো। এটি একটি পয়েন্ট রিলিজ ডিস্ট্রো। বছরে (এপ্রিল ও ডিসেম্বর মাসে) দুটি করে নতুন রিলিজ আনে উবুন্টু, যেগুলোতে ৯ মাস করে সাপোর্ট প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, ২ বছর পরপর এলটিএস এডিশন আনে তারা, যেখানে সাপোর্ট দেওয়া হয় অন্তত ৫ বছর।

উবুন্টু বলতে সাধারণত এর গ্নোম এডিশনকে বোঝানো হয়। অবশ্য উবুন্টুর গ্নোম বেশ কাস্টমাইজড, যেখানে নতুন ব্যবহারকারীরা সহজেই মানিয়ে নিতে পারেন। এখানে ডার্ক মোডও রয়েছে। অরেঞ্জ এবং পার্পলের একটা ভাব রয়েছে পুরো ইউআইতে, যেটা বেশ ব্যতিক্রমধর্মী।

তবে এর আরো কিছু ফ্লেভার আছে। যেমন, কুবুন্টু (Kubuntu), লুবুন্টু (Lubuntu), জুবুন্টু (Xubuntu), উবুন্টু মাতে (Ubuntu Mate), উবুন্টু বাজ্বি (Ubuntu Budgie) যারা যথাক্রমে কেডিই (KDE), এলএক্সকিউট (LXQt), এক্সএফসিই (XFCE), মাতে (Mate) ও বাজ্বি (Budgie)।

তাছাড়া মাল্টিমিডিয়া ফোকাসড একটি ভ্যারায়েন্ট আছে, যেটি হলো উবুন্টু স্টুডিও (Ubuntu Studio), এখানে এতদিন XFCE ব্যবহার হয়েছে, তবে পরবর্তী ভার্সনে KDE-তে সুইচ করার কথা রয়েছে। আরেকটি চাইনীজ ভ্যারায়েন্টও আছে, উবুন্টু কাইলিন (Ubuntu Kylin), এর ডেস্কটপ ইউকেইউআই (UKUI)। আরো কিছু আনঅফিসিয়াল ফ্লেভারও আছে, উল্লেখযোগ্য দুটি হলো ডিপিন (Deepin) ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট এর সাথে সাথে উবুন্টু ডিডিই (UbuntuDDE), সিনামন ডেস্কটপের সাথে উবুন্টু সিনামন রিমিক্স (Ubuntu Cinnamon Remix)

উবুন্টু শুধু একটা অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে বেশি কিছু। ডেস্কটপের পাশাপাশি আইওটি, সার্ভার, ক্লাউড, রাস্পবেরী পাইয়ের জন্যও উবুন্টু আছে। মিনিমালিস্টদের জন্য আছে মিনিমাল ইন্সটলের সুবিধা। স্বাদের সাথে মিলিয়ে নেওয়ার জন্য আছে বিভিন্ন ফ্লেভার। চমৎকার স্ট্যাবিলিটির জন্য আছে এলটিএস রিলিজ। ১৬ বছরের যাত্রাপথে উবুন্টু পরিচয় দিয়েছে বিশ্বস্ততার। টিউটোরিয়াল, কমিউনিটি সাপোর্ট সবকিছুই পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। তাই, নির্ঝঞ্ঝাট লিনাক্সের অভিজ্ঞতার জন্য বেছে নিতে পারেন উবুন্টু।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

লিনাক্স মিন্ট

লিনাক্স মিন্ট, বাংলায় পুদিনা পাতা, ডাকনাম মিন্টু, যেকোনটা বলতে পারেন। বিশেষ সুনাম আছে ইউজার ফ্রেন্ডলি হিসেবে। তাদের লক্ষ্য হলো একটি মডার্ন, এলিগেন্ট এবং কমফোর্টেবল ওএস তৈরি করা যেটা কিনা একইসাথে পাওয়ারফুল ও ইজি টু ইউজ। লিনাক্স মিন্ট উবুন্টুর এলটিএস ভার্সনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এটি একটি পয়েন্ট রিলিজ ডিস্ট্রো।

সাধারণ ব্যবহারকারী ও লিনাক্সে নতুন যারা, তাদের জন্য বিশেষভাবে লিনাক্স মিন্ট সাজেস্ট করা হয়ে থাকে। কারণ, এটা ব্যবহার করা খুবই সহজ। ইন্টারফেস বেশ ট্র্যাডিশাল, উইন্ডোজের সাথে মিল আছে। তাই উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা সহজেই ব্যবহার করতে পারে। নতুনদের কথা চিন্তা করে মিন্টকে বিশেষায়িত করা হয়েছে।

মিন্টের ওয়েলকাম স্ক্রিন বেশ সাহায্য করবে মানিয়ে নিতে। নতুন সিস্টেমটি ইন্সটলের পর কী কী করা যেতে পারে এবং কীভাবে করতে হবে, সে বিষয়ে ওয়েলকাম স্ক্রিনটি বেশ হেল্পফুল। একটি সিস্টেম রিপোর্ট টুল রয়েছে। কোন আপডেট, ড্রাইভার, কোডেক, ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক ইন্সটল প্রয়োজন আছে কিনা এ বিষয়গুলো এখানে ইনফর্ম করা হয়। একটি ব্যাকআপ ইউটিলিটি (টাইমশিফট)-ও রয়েছে, যাতে সিস্টেমের কোন সমস্যা হলে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।

ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টের কথায় আসলে লিনাক্স মিন্ট তিনটি এনভায়রনমেন্টে অফার করা হয়। সিনামন, মাতে ও এক্সএফসিই। তিনটিই বেশ লাইটওয়েট ও কাস্টমাইজেবল। মাতে বেশি কাস্টমাইজেবল এবং এক্সএফসিই সবচেয়ে লাইটওয়েট। তবে লিনাক্স মিন্টের ফ্ল্যাগশিপ হলো সিনামন বা দাঁড়চিনি। এটি তারা নিজেরাই ডেভেলোপ করে। পুদিনা পাতার সাথে দাঁড়চিনির কম্বিনেশন বেশ ভালো।

লাইট, সেমি-ডার্ক ও ডার্ক থিম রয়েছে লিনাক্স মিন্টে, যেগুলোর বিভিন্ন কালার একসেন্ট থাকছে। ডিফল্ট থিমে একটা সবুজ ছোঁয়া আছে মিন্টে। তাদের Mint-Y সিরিজের থিম ফ্লাট ও মডার্ন এবং Mint-X সিরিজটি ক্লাসিক ও ফ্যান্সি। এর বাইরে অন্য যেকোন GTK থিম ব্যবহারের সুযোগ তো আছেই।

উবুন্টু যেহেতু দুবছর পরপর এলটিএস ভার্সন রিলিজ করে, তাই এই সময়ের মধ্যবর্তী লিনাক্স মিন্টের প্রতিটি রিলিজ উবুন্টুর পূর্ববর্তী এলটিএস ভার্সনকে ভিত্তি করে তৈরি হয়। এর ফলে স্ট্যাবিলিটি ভালো হয়, তবে যারা আপ টু ডেট থাকতে পছন্দ করেন, তাদের হয়ত বিষয়টি ততটা পছন্দ হবে না।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

জরিন ওএস

লিনাক্স মিন্টের মত জরিন ওএসও নবাগতদের কথা বিশেষভাবে চিন্তা করে তৈরি। পিসিকে আরো সহজ, আরো দ্রুত, আরো শক্তিশালী, আরো নিরাপদ করার জন্য উইন্ডোজ ও ম্যাক ওএসের একটি ভালো বিকল্প হিসেবে জরিন ওএস বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে। এটিও উবুন্টুর এলটিএস ভার্সন ব্যবহার করে। উবুন্টুর রিপোজিটরীর পাশাপাশি জরিন ওএসের নিজস্ব রিপোজিটরী থেকে কিছু অ্যাপের আপডেট ভার্সন পাওয়া যায়, যা মিন্ট থেকে একটি প্লাসপয়েন্ট।

জরিন ওএসের কয়েকটি এডিশন রয়েছে। কোর, আল্টিমেট, এডুকেশন এবং এদের প্রত্যেকের লাইট ভার্সন। এর মধ্যে আল্টিমেট ও আল্টিমেট লাইট এডিশন ফ্রি নয়। বাকি এডিশনগুলো ফ্রি। কোর ভার্সনের সবকিছুর সাথে বাড়তি কিছু অ্যাপ, লেআউট ও ইন্সটলেশন সাপোর্ট যুক্ত রয়েছে আল্টিমেট ভার্সনে। আর এডুকেশন ভার্সনে এডুকেশনাল অ্যাপগুলো যুক্ত আছে।

জরিন ওএস কোর লাইট

ছবিতে জরিন ওএস দেখতে আপনার কাছে কিছুটা উইন্ডোজের মত লাগে, তাহলে আপনি ঠিকই ধরেছেন। আর এটা কোন সিক্রেট নয়, এটাকে উইন্ডোজ লেআউটই বলা হয়। কারণ তারা সবসময়ই উইন্ডোজ ও ম্যাক থেকে লিনাক্সে নতুন আগতদের বিশেষ সুবিধা দিতে চেষ্টা করে। জরিন ওএস কোর ভার্সনে তিনটি লেআউট রয়েছে, উইন্ডোজ, উইন্ডোজ ক্লাসিক ও টাচ লেআউট। টাচ লেআউটটি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। অন্যদিকে, আল্টিমেট ভার্সনে আরো তিনটি লেআউট থাকছে, ম্যাক, গ্নোম ৩ ও উবুন্টু। লাইট ভার্সনে টাচ লেআউট নেই।

জরিন ওএসের ডিফল্ট ডিই হলো গ্নোম, যা চালাতে অন্তত ২ জিবি র‍্যাম প্রয়োজন, তবে ৪ জিবি র‍্যাম থাকলে ভালো। অন্যদিকে লাইট এডিশনে এক্সএফসিই ডেস্কটপ ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি চালাতে ১ জিবি র‍্যাম যথেষ্ট। তবে উভয় ডিই-তে বেশ ভালোরকম কাস্টমাইজেশনের ছোঁয়া রয়েছে, আর একারণে দুটির মধ্যে পার্থক্যও খুব বেশি নয়। দুটোই সমানভাবে সুন্দর, তবে এনিমেশনের ব্যবহার সেভাবে নেই লাইট এডিশনে আর এটা একটু বেশি সিম্পল তবে একইসাথে বেশি কাস্টমাইজেবল।

জরিন ওএস কোর

জরিন ওএসের একটি অ্যাপের কথা আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, তা হলো জরিন কানেক্ট। এটা এন্ড্রয়েডের সাথে ইনটিগ্রেশনের জন্য। বর্তমানে যেহেতু প্রায় সবারই একটি অ্যান্ড্রয়েড আছে, তাই এরকম অ্যাপ প্রি-ইন্সটলড থাকাটা ভালো লেগেছে। অবশ্য এটা লাইট ভার্সনে নেই।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

পপ ওএস (Pop!_OS)

Pop!_OS এর নির্মাতা System76 মূলত একটি হার্ডওয়্যার কোম্পানি, তাদের বেশকিছু লিনাক্স ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও মিনি কম্পিউটার আছে। পরবর্তীতে তারা তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসে। বেশ নতুন বলা যায় পপ ওএসকে, ২০১৭ সালের দিকে যাত্রা শুরু। তবে অল্প সময়ে ভালো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছে এবং আমার নিজেরও এটা সবচেয়ে প্রিয় ডিস্ট্রো।

পপ ওএস একটি উবুন্টুভিত্তিক ডিস্ট্রো এবং এর রিলিজ শিডিউল অনেকটা উবুন্টুর মতই, অর্থাৎ উবুন্টুর নতুন ভার্সন রিলিজে কিছুদিন পর তারা সে ভার্সনভিত্তিক পপ ওএস আনে। পপ ওএসের মূল বিশেষত্ব হলো এটি ডেভেলোপারদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এটি গ্নোম ডেস্কটপ ব্যবহার করে, তবে উবুন্টুর তুলনায় গ্নোমের অনেকটা বিশুদ্ধ অনুভূতি পাওয়া যায়, যদিও এখানে অনেক বাড়তি ফাংশনালিটি যুক্ত রয়েছে।

এটা দেখতে বেশ সুন্দর, ক্লিন ও মডার্ন। লাইট অথবা ডার্ক মোড থাকছে। এর ওয়ার্কফ্লো ট্র্যাডিশনাল উইন্ডোজের ওয়ার্কফ্লো থেকে অনেকটা ভিন্ন। ছবিতে খেয়াল করলে যাবে উইন্ডোতে কোন মিনিমাইজ বা ম্যাক্সিমাইজ বাটন নেই। অথবা কোন টাস্ক ম্যানেজারও নেই।

এখানে মূলত Activites Overview থেকে অ্যাপ ওপেন, সুইচ ও বিভিন্ন ওয়ার্কস্পেসে সাজিয়ে রাখা যায়। নতুন অবস্থায় এই পদ্ধতিতে অভ্যস্থ হতে একটু সময় লাগতে পারে, তবে অভ্যাস হয়ে গেলে এটা বেশ চমৎকার। আর বিভিন্ন কীবোর্ড শর্টকাট পদ্ধতিটিকে আরো ইফিশিয়েন্ট করে। এছাড়া প্রয়োজনে টুইক টুল ও এক্সটেনশন ব্যবহার করে মিনিমাইজ ম্যাক্সিমাইজ বাটন, ডক বা প্যানেল যুক্ত করে নেওয়ার সুযোগ তো আছেই।

তবে পপ ওএসের সেরা ব্যাপারটি হলো পপ শেল। পপ শেল গ্নোম ডেস্কটপকে আরো ফাংশনাল করে। পপ শেলে টাইলিং ফিচার রয়েছে, টাইলিং উইন্ডো ম্যানেজারগুলোর মতন, যা প্রয়োজনমত চালু বা বন্ধ করা যায়। চালু থাকলে ছবির মত উইন্ডোগুলো সজ্জিত থাকে এবং মাউসের পরিবর্তে কীবোর্ড ব্যবহার করেও প্রয়োজনমত রিসাইজ, অন্য ওয়ার্কস্পেসে স্থানান্তর, নতুন অ্যাপ চালু করা যায়।

যেমনটা বলেছি, পপ ওএস ডেভেলোপারদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এবং এক্ষেত্রে পপ শেলের যে ফিচারটি আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে, তা হলো এর কীবোর্ড ন্যাভিগেশন। এখানে অ্যাপ চালু-বন্ধ, উইন্ডো রিসাইজ, মুভ, ওয়ার্কস্পেস পরিবর্তন প্রায় সবরকম ন্যাভিগেশন কীবোর্ড দিয়েই করা যায়, যেটা খুবই কাজে আসে।

অল্প সময়েই পপ ওএসের ভালো সংখ্যক ইউজার তৈরি হয়েছে। তাদের সাপোর্টও বেশ ভালো। আবার উবুন্টুর জন্য তৈরি অধিকাংশ টিউটোরিয়াল পপ ওএসেও প্রয়োগ করা যায়। সব মিলিয়ে পপ ওএস চমৎকার, বিশেষ করে ডেভেলোপারদের জন্য ভালো পছন্দ হতে পারে।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

ডিপিন

একটা অপারেটিং সিস্টেম কতটা সুন্দর হতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ডিপিন। সুন্দরতম অপারেটিং সিস্টেমের তালিকায় শীর্ষস্থানটি সহজেই অর্জন করতে পারে এই চাইনীজ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনটি। এটি অবশ্য উবুন্টু ভিত্তিক নয়, ডেবিয়ানভিত্তিক। এটিও একটি পয়েন্ট রিলিজ ডিস্ট্রো, তবে উবুন্টুর মত স্ট্রিক্ট কোন শিডিউল নিয়ন্ত্রণ করে না।

ডিপিন তাদের নিজেদের ডেভেলোপকৃত ডিপিন ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট (ডিডিই) ব্যবহার করে। ডিপিন ওএসের একটি সুন্দর ব্যাপার হলো, এখানে টেক্সট এডিটর, সিস্টেম মনিটর, ফাইল ম্যানেজার, সফটওয়্যার ম্যানেজার, অডিও-ভিডিও প্লেয়ার প্রভৃতি তাদের নিজেদের ডেভেলোপকৃত, ফলে একটা চমৎকার কনসিস্টেন্সি পাওয়া যায়।

সৌন্দর্য্যের সাথে ডিপিনের ইন্টারফেস বেশ সিম্পল এবং ব্যবহার একদমই সহজ। কাস্টমাইজেবিলিটির দিক দিয়ে অবশ্য এটা অন্যদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকে। এখানে সংযুক্ত লাইট ও ডার্ক মোডের বাইরে অন্য থিম সাধারণভাবে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে একসেন্ট কালার, আইকন থিম, প্যানেল স্টাইল ও পজিশন প্রভৃতি পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে।

ডিপিন ২০ নিয়ে আমাদের রিভিউয়ে এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে: ডিপিন ২০ রিভিউ

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

আর্চ লিনাক্স

আর্চ অবশ্য নতুনদের জন্য একদমই নয়, আসলে এটা ইন্সটল করতেও বেশ দক্ষতা প্রয়োজন। এই ডিস্ট্রোটি একটু অন্যরকম। এখানে শুরুতে শুধু কমান্ড লাইন ধরিয়ে দেওয়া হয়, আর কিছু না। ইন্সটলেশন কমান্ড লাইনেই করতে হয়। এরপর পছন্দমত ডেস্কটপ ইন্টারফেস বা উইন্ডো ম্যানেজার ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো ইন্সটল করে নিতে হয়।

যারা সবকিছু নিজের মত গুছিয়ে নিতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য আর্চ বিশেষভাবে উপযুক্ত। অবশ্যই এটা চালাতে হলে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। আর্চ উইকি আর্চ চালানোর জন্য চমৎকার একটি গাইডলাইন। তাদের ফোরামও রয়েছে। আর্চ লিনাক্স একটি রোলিং রিলিজ ডিস্ট্রো, অর্থাৎ ক্রমাগত আপডেট হতে থাকে এবং আপ টু ডেট সফটওয়্যার পাওয়া যায়। এটি লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করে স্বাধীনভাবে ডেভেলোপ করা হয়েছে, অন্য কোন ডিস্ট্রো ভিত্তি করে নয়।

আর্চ লিনাক্সের চমৎকার একটি ব্যাপার হলো AUR বা আর্চ ইউজার রিপোজিটরি। সফটওয়্যার ইন্সটলেশন অংশে আমরা এবিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

মানজারো লিনাক্স

আর্চ লিনাক্সের চমৎকার কিছু দিক থাকলেও তা ব্যবহার বেশ কঠিন। এখানে চলে আসে মানজারো লিনাক্স, যা আর্চ লিনাক্সকে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। মানজারোতে আর্চের সুবিধাগুলো পাওয়া যায়, আবার ব্যবহারও কঠিন নয়। তাই বেশ জনপ্রিয় জার্মানভিত্তিক এই ডিস্ট্রোটি। আর্চের মতই এটি রোলিং রিলিজ।

মানজারোর কমিউনিটি উবুন্টুর মত তত বড় না হলেও এটা লিনাক্সের জগতে খুব পরিচিত নাম আর এখানেও সাপোর্ট মন্দ নয়। তাছাড়া, আর্চউইকিমানজারো উইকিইউজার গাইড বেশ ডিটেইলড এবং হেল্পফুল।

মানজারো বেশ কিছু ডেস্কটপ ইন্টারফেসে পাওয়া যায়। এর মধ্যে কেডিই, গ্নোম ও এক্সএফসিই অফিসিয়াল এবং এলএক্সডিই, মাতে, এলএক্সকিউট, সিনামন ও বাজ্বি ডেস্কটপ কম্যুনিটি এডিশন হিসেবে পাওয়া যায়। মানজারোর প্রতিটি ডেস্কটপ আউট অফ দি বক্স বেশ চমৎকার।

এর বাইরে রয়েছে আরো কিছু উইন্ডো ম্যানেজারভিত্তিক এডিশন ও একটি আর্কিটেক্ট এডিশন এডভান্সড ইউজারদের জন্য। বিশ্বস্ততা ও সাপোর্টের দিক দিয়ে অফিসিয়াল ও কম্যুনিটি রিলিজগুলোর বিশেষ পার্থক্য নেই। এগুলো একই রিপো ব্যবহার করে এবং মানজারো মেইনটেইনারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মানজারো এডিশনগুলোর দুধরণের আইএসও প্রভাইড করে। রেগুলার ও মিনিমাল।

সফটওয়্যার ম্যানেজার হিসেবে এখানে প্রিইন্সটল্ড আছে Pamac। ইন্টারফেস তত রঙচঙে না হলেও ব্যবহার সহজ আর অন্যান্য অনেক গ্রাফিকাল সফটওয়্যার ম্যানেজারগুলোর তুলনায় ফাস্ট কাজ করে। এটার একটা সুবিধা হলো অনেক সফটওয়্যার নির্বাচন করে একসাথে ইন্সটল করা যায় এবং AUR, Snap, Flatpak সমর্থিত।

সোলাস

সোলাস আরেকটি স্বাধীনভাবে ডেভেলোপ করা ডিস্ট্রো। এটিও রোলিং রিলিজ। সোলাসের চারটি এডিশন আছে, বাজ্বি, নোম, মাতে ও কেডিই প্লাজমা। বাজ্বি ডিই তাদের নিজেদের ডেভেলোপ করা। বেশ বোল্ড একটা লুক আছে, এবং ডার্ক মোডটা আসলেই ডার্ক।

সোলাসের অসাধারণ ব্যাপারটা হলো এটা ব্লেজিং ফাস্ট। হার্ডডিস্ক হওয়া সত্ত্বেও ২০ সেকেন্ডের মধ্যে চালু হয়ে যায়, আর বন্ধ হতে ৩-৪ সেকেন্ডের মত নেয়, এসএসডি থাকলে আরো দ্রুত হওয়ার কথা। অ্যাপ ওপেনিং, ক্লোজিং, সুইচিং টাস্কগুলো বেশ দ্রুত। এই স্মুথনেস একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা দেয়।

সোলাস তৈরি হয়েছে সাধারণ হোম ইউজারদের জন্য। পার্সোনাল কম্পিউটারে ডে-টু-ডে টাস্কে ব্যবহারের জন্য আদর্শ একটি অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে এটি বিল্ড করা হয়েছে। রোলিং রিলিজ বলে লেটেস্ট অ্যাপগুলো এখানে পাওয়া যাবে। ইনডিপেনডেন্টলি ডেভেলোপড হিসেবে সোলাসের নিজস্ব রিপোজিটরী, প্যাকেজ ম্যানেজার ও সফটওয়্যার সেন্টার আছে। তাদের প্যাকেজ ম্যানেজার হলো eopkg

সফটওয়্যার সেন্টারটিও বেশ দ্রুতগতির মনে হয়েছে। প্রয়োজনীয় ও জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলো রিপোজিটরীতে দেওয়া আছে। বাজ্বির বিভিন্ন অ্যাপলেট ও থিম প্রভৃতিও সরাসরি সফটওয়্যার সেন্টার থেকেই ইন্সটল করা যায়। তবে এখানে বড় ধরণের সীমাবদ্ধতা আছে, তা হলো রিপোজিটরীর বাইরে সফটওয়্যার ইন্সটলের জন্য এখানে ন্যাটিভ কোন উপায় নেই। ফলে কিছু সফটওয়্যার নিয়ে মুশকিলে পড়তে হতে পারে বা সোর্স থেকে বিল্ড করা হতে পারে চালানোর একমাত্র উপায়। উবুন্টুতে PPA/deb, ফিডোরাতে RPM, আর্চে AUR পদ্ধতি থাকলেও এখানে তেমন কিছু নেই।

সোলাস স্বাধীনভাবে ডেভেলোপ হওয়ায় অনেকটা ভিন্নধর্মী এবং অন্য লিনাক্স ব্যবহারকারীদের কিছুটা নতুন ধরণের অভিজ্ঞতা দেয়। তবে এর কমিউনিটি উবুন্টু কিংবা আর্চ কিংবা ফিডোরা পরিবারের মত বড় নয়। এটির জন্য অনলাইনে রিসোর্স তুলনামূলক কম। এছাড়া রিপোজিটরী যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়। এবং এটি এখনও আরো ডেভেলোপমেন্ট প্রয়োজন মনে হয়েছে।

অফিশিয়াল ওয়েবসাইট

ফিডোরা

রেডহ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্সের কমিউনিটি এডিশন হলো ফিডোরা। রেডহ্যাট কমার্শিয়াল, তবে ফিডোরা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এটি RPM-ভিত্তিক। যদিও এটি পয়েন্ট রিলিজ ডিস্ট্রো, বছরে দুটি করে রিলিজ হয়, তবে অনেকটা রোলিং রিলিজের মত নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট পাওয়া যায়। বলে রাখি, ফিডোরার সাথে আমার অভিজ্ঞতা খুবই অল্প সময়ের। একারণে আসলে ফিডোরা নিয়ে আমার নিজেরও খুব বেশি জানা নেই।

ফিডোরার বেলায় মূল এডিশনটি গ্নোম এবং আরো কিছু স্পিনস আছে, যেমন, কেডিই, এক্সএফসিই, মাতে কম্পিজ, সিনামন, এলএক্সডিই, এলএক্সকিউট, এসওএএস প্রভৃতি আছে। ডেস্কটপ ইন্টারফেসগুলোর বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতার জন্য ফিডোরা ব্যবহার করা যেতে পারে, কেননা আউট অফ দি বক্স এখানে কাস্টমাইজেশন নেই বললেই চলে।

অবশ্য এজন্য আমার কাছে এটা সৌন্দর্য্যের দিক দিয়ে অন্যদের মত নয়। তবে বিশুদ্ধতার একটা স্বাদ ফিডোরাতে পাওয়া যায়, আর নিজের মত কাস্টমাইজের সুযোগ তো আছেই।

সফটওয়্যারের দিক দিয়েও ফিডোরাকে বিশুদ্ধবাদী বলা যায়। রিপোজিটরীতে সম্ভবত কেবল বিশুদ্ধ  ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলো আছে। অন্যান্য সফটওয়্যার কমিউনিটি মেইনটেইনড RPM Fusion বা .rpm ফাইল থেকে ইন্সটল করা যায়।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

কালি লিনাক্স, প্যারট সিক্যুরিটি ওএস, ব্লাক আর্চ

এই জিনিসগুলো আমি কখনোই চালাইনি। কেন যেন অনেকে লিনাক্স বলতে এই ওএসগুলো বুঝে। এগুলো আসলে নিরাপত্তা, অনুপ্রবেশ যাচাই এধরণের বিষয়গুলোকে প্রায়োরিটি দিয়ে তৈরি, এবং হ্যাঁ, সেই সাথে হ্যাকারদের জন্যও আদর্শ বটে। তবে সাধারণ মানুষদের জন্য অবশ্যই এগুলো তৈরি হয়নি। কাজেই লিনাক্সের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য এই অপারেটিং সিস্টেমগুলো আমি অবশ্যই সাজেস্ট করি না।

ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট

এখন আমরা কয়েকটি ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। এটা আসলে ব্যক্তিগত পছন্দের একটি বিষয়, সেইসাথে পিসির কনফিগারেশনের বিষয়টিও খেয়াল রেখে একটি ডিই পছন্দ করা যেতে পারে।

Gnome

আভিধানিকভাবে Gnome উচ্চারণ নোম, তবে এক্ষেত্রে উচ্চারণ হবে গ্নোম। এটা খুব সম্ভব সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিই। বেশ এডভান্সড এবং এখানে এক্সটেনশন ব্যবহার করে বাড়তি ফাংশনালিটি যুক্ত করা যায়। গ্নোম ব্যবহার করতে তুলনামূলক একটু ভালো কনফিগারেশন প্রয়োজন। তেমন কিছু না, ২ জিবি র‍্যামে চলবে, তবে ৪ জিবি হলে ভালো।

গ্নোমের ওয়ার্কফ্লো কিছুটা ভিন্নধর্মী, যা পপ ওএস সংক্রান্ত আলোচনায় আলোকপাত করা হয়েছে।  আর টুইক টুলস ও এক্সটেনশন ব্যবহার করে এটাকে পছন্দমত কাস্টমাইজ করে নেওয়া যায়। ভ্যানিলা বা স্টক গ্নোমে ম্যাক্সিমাইজ বা মিনিমাইজ বাটন নেই, ডাবল ক্লিক বা উপরে টেনে নিয়ে বা রাইট ক্লিক মেনু থেকে ম্যাক্সিমাইজ করতে হয়। রাইট ক্লিক মেনুতে মিনিমাইজ অপশন আছে, তবে গ্নোমে সাধারণত এর দরকার নেই, যেহেতু এখানে ওয়ার্কফ্লোতে বিন্যস্ত করে রাখার পদ্ধতি।

গ্নোমের এই ভিন্নধর্মী ওয়ার্কফ্লো শুরুতে অপরিচিত হলেও অভ্যস্থ হয়ে গেলে এটা বেশ অসাধারণ, উইন্ডোজ বা অন্য ডিই থেকে অনেকটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা। অবশ্য সব ডিস্ট্রোতে নয়, যেমন উবুন্টু বা মানজারোতে গ্নোম ডেস্কটপকে কাস্টমাইজ করে দেওয়া হয়েছে যাতে নতুনরা সুবিধা পায়।

KDE Plasma

সম্ভবত সবচেয়ে এডভান্সড এবং সবচেয়ে কাস্টমাইজেবল ডিই হলো কেডিই প্লাজমা। নিচের তিনটি ছবিই কেডিই প্লাজমা ডিইসহ কুবুন্টুতে, এটা কতটা কাস্টমাজেবল কিছুটা অনুমান করতে পারেন এটা দেখে।

সেটিংসে গেলেই খানিকটা বোঝা যাবে কতশত অপশন এখানে ঠেসে দেওয়া হয়েছে। আবার এত এডভান্সড ফিচার থাকলেও ব্যবহার একদমই সহজ, কারণ যে ফিচারগুলো আপনার দরকার নেই, সেগুলো ব্যবহারেরও জরুরত নেই। আর কেডিই খুব ভালো ইনটিগ্রেটেড, যেটা ফিল করা যায়।

কেডিইতে ডেস্কটপ ও প্যানেলে উইজেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। উইন্ডোজ ৭ এর কথা যদি মনে থাকে, সেখানে ডেস্কটপে গ্যাজেট ব্যবহার করা যেত। তবে কেডিই-র উইজেট ঠিক সেরকম সয়, তারচেয়ে একটু বেশি কিছু। একই উইজেট প্যানেল ও ডেস্কটপে ব্যবহার করা যাবে। আর নতুন নতুন উইজেটও ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

কেডিই-তে নতুন নতুন থিম, আইকন, উইন্ডো বর্ডার, কার্সর থিম, উইজেট, ওয়ালপেপার প্রভৃতি ডাউনলোড করতে গুগল সার্চ বা কিছুই করতে হবে না। সেটিংস থেকেই এড নিউ অপশনের মাধ্যমে সরাসরি ডাউনলোড ও ব্যবহার করতে পারবেন। এন্ড্রয়েডের সাথে কেডিইর খুব ভালো সম্পর্ক। কেডিই কানেক্ট এর মাধ্যমে চমৎকারভাবে এন্ড্রয়েড ও কেডিই ইন্টিগ্রেট করা যায়।

মজার ব্যাপার হলো, প্রচুর এডভান্সড ফিচার্স, এনিমেশন, কাস্টমাইজেবিলিটি থাকা সত্ত্বেও এটা খুব বেশি রিসোর্স কনজ্যুম করে না। ২ জিবি র‍্যামের পিসিতে সহজেই ব্যবহার করেছি।

XFCE

এক কথায় এক্সএফসিইকে প্রকাশ করতে হলে বলতে হবে সিম্পল। যারা মিনিমালিস্ট, সিমপ্লিসিটি পছন্দ করেন, তাদের এক্সএফসিই পছন্দ হওয়ারই কথা। এটাও খুবই কাস্টমাইজেবল, তবে কেডিই থেকে পিছিয়ে থাকবে। অবশ্য এমনিতে এটা ততটা সুন্দর নয়। নিচের ছবিতে ফিডোরা এক্সএফসিই।

তবে কাস্টমাইজেশন করে এটাকে খুব চমৎকার রূপ দেওয়া যায়। মানজারো বা লিনাক্স মিন্ট বা জরিন ওএস লাইট ভার্সনে এক্সএফসিই বেশ সুন্দরভাবে কাস্টমাইজ করা। নিচের ছবিতে আমার একসময়ে কাস্টমাইজ করা জুবুন্টু।

এক্সএফসিইতে কোন ক্লোজ, মিনিমাইজ প্রভৃতি একশনে কোন এনিমেশন ব্যবহার হয় না। ফলে প্রথম দিকে আমার বেশ আনইজি লাগতো। কিন্তু এখন অভ্যস্থ হওয়ার পর এতে বরং সুবিধা মনে হয়, কাজের গতি বাড়ে। যারা সিম্পলের মধ্যে সৌন্দর্য্য খুঁজে পান, তাদের জন্য এবং তাদের জন্যই এক্সএফসিই চমৎকার।

১ জিবি র‍্যাম থাকলেই এক্সএফসিই সুন্দরভাবে চালানো সম্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু পরের উইন্ডোজ এক্সপি চালিত পিসির জন্য এক্সএফসিই হতে পারে চমৎকার সমাধান।

Cinnamon

সিনামন ডেস্কটপটি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম মিন্টের ডিই। এটিও খুবই কাস্টমাইজেবল, আসলে অল্প কিছু ডিই ছাড়া সব লিনাক্স ডিই-ই প্রচুর পরিমাণে কাস্টমাইজেবল। সিম্পল এবং সুন্দর। আর সিনামন খুব ইউজার ফ্রেন্ডলি। এটা গ্নোম ৩ থেকে ফর্ক করা, যদিও এখন আর গ্নোমের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। না দেখতে, না ব্যবহারের দিক দিয়ে।

কেডিই যতটা ঝাঁকানাকা, সিনামন ততটা না। আর এক্সএফসিই যতটা সিম্পল, সিনামন ততটাও না। সিনামন ডেস্কটপের ডিফল্ট Mint Y থিম ও আইকনগুলো আমার চোখে খুব সুন্দর, দেখতে বেশ লাগে। এটার ইন্টারফেসেও উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য অপরিচিত হবে না। মানে ইন্সটলের পরে নিচে একটা প্যানেল আর উইন্ডোজের মতই পজিশনে মেনু, অ্যাপ লিস্ট, সিস্টেম ট্রে প্রভৃতি পাওয়া যাবে।

সিনামনেও কেডিই-র মত থিম, আইকন, অ্যাপলেট প্রভৃতি ডাউনলোড সেটিংস থেকে করে নেওয়া যাবে। থাকছে সুন্দর অ্যানিমেশন ও ইউজার ফ্রেন্ডলি পরিবেশ। এটা বেশ লাইটওয়েট, তবে এক্সএফসিই থেকে কিছুটা কম।

Mate

অনেকেই Mate উচ্চারণ ভুল করে থাকেন, কেননা এর উচ্চারণ মাতে, মেট নয়। এটা এক ধরণের সম্ভবত চা-জাতীয় পানীয়র নামে নাম দেওয়া হয়েছে।

মাতে ডেস্কটপ গ্নোম ২ এর ফর্ক। গ্নোম ২ থেকে গ্নোম ৩-এ সুইচ করার পর গ্নোম ডেস্কটপে বড় ধরণের পরিবর্তন আসে, যা অনেকেরই পছন্দ হয়নি। সেখান থেকেই মাতে ডেস্কটপের উৎপত্তি। সত্যি বলতে এই সময়ে আমার এটা একটু পুরনো ফিল দেয় মনে হয়। গ্নোম ২ যেহেতু ২০১০ সালের দিকের, পুরনো আমলের পিসিতে মাতে সহজেই চালানো যায়।

মাতেও বরাবরের মতই খুবই কাস্টমাইজেবল, সম্ভবত এদিক দিয়ে কেডিই-র পরের স্থানটি মাতের হবে। বিশেষ করে কম্পিজ উইন্ডো ম্যানেজার ব্যবহার করে এখানে দুর্দান্ত ইফেক্ট দেওয়া যায়। ভিডিওতে কাস্টমাইজড মাতে দেখানো হয়েছে:

LXQt/LXDE

এটা আমাদের তালিকায় সবচেয়ে হালকা। ৫১২ এম্বি র‍্যামেও চলার কথা। LXDE GTK2 (GIMP ToolKit 2) লাইব্রেরী ব্যবহার করে। পরবর্তীতে GTK3 ডেভেলোপারদের উপযুক্ত মনে না হওয়ায় LXQt তৈরি হয়েছে, যা Qt (উচ্চারণ কিউট) লাইব্রেরী ব্যবহার করে। বর্তমানে দুটোই ডেভেলোপমেন্ট চালু আছে।

লুবুন্টু (LXQt)

LXDE আইডল সিচুয়েশনে মাত্র ২০০ এম্বির মত র‍্যাম নেয়, LXQt  তার চেয়ে ১০০ এম্বির মত বেশি। লাইটওয়েট হিসেবে বেশ চমৎকার। যাদের কনফিগারেশন একদমই ভালো নয়, তারা এই ডিইদুটো উপযুক্ত। অবশ্য, XFCE থেকে ফাংশনালিটি এর কিছুটা কম।

ইন্সটলেশন

লিনাক্স ডিস্ট্রোভেদে ইন্সটলার ও ইন্সটলেশন পদ্ধতিতে ভিন্নতা আসে। সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রোর অফিসিয়াল ডকুমেন্টেশন এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। তবে ইন্সটলারগুলো দেখতে কিছুটা ভিন্ন ও কিছু ধাপ এদিক-ওদিক থাকলেও, আসলে ইন্সটলেশন পদ্ধতিতে সাধারণভাবে খুব বেশি পার্থক্য নেই। এখানে খুব সংক্ষেপে লিখছি, প্রয়োজনে লিনাক্সে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে পারেন।

লিনাক্স পুরো হার্ডডিস্ক ফরমেট করে বা উইন্ডোজের পরিবর্তে বা উইন্ডোজের পাশাপাশি (ডুয়াল বুট) ইন্সটল দেওয়া যায়। প্রথমেই সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রোটির আইএসও ফাইল ডাউনলোড করে বুটেবল ডিস্ক তৈরি করে নিতে হবে। ডিভিডি হলে সাধারণভাবে রাইট করে নিন। পেনড্রাইভের জন্য আমার সবচেয়ে সহজ মনে হয়েছে Ventoy

আপনার সিস্টেম MBR না GPT না জানলে জানার জন্য Start বাটনে রাইট ক্লিক করে Command Prompt (Admin) অথবা Powershell (Admin) চালু করুন। এখানে প্রথমে লিখুন diskpart এবং এরপর লিখুন list disk। এখন Gpt ঘরটা খেয়াল করুন, নিচের ছবিতে সেটি খালি রয়েছে। এর অর্থ আমার পার্টিশন টেবিল MBR, আর যদি এখানে * চিহ্ন থাকে, তবে আপনার পার্টিশন টেবিল GPT।

আমাদের জানা দরকার সিস্টেমটি UEFI নাকি Legacy মোডে আছে। এজন্য Windows+R চাপুন, Run Box চালু হবে। সেখান থেকে msinfo32 লিখে এন্টার চাপুন। এখন BIOS Mode ঘরে দেখুন, তা Legacy নাকি UEFI।

ছবিটি It’s FOSS থেকে নেওয়া

যদি উইন্ডোজ ৮/৮.১/১০ এবং UEFI সিস্টেম হয় এবং আপনি ডুয়াল বুট করতে চান, তাহলে সিকিউর বুট এনাবল থাকলে ডিজেবল করে নিতে হবে, এই টিউটোরিয়াল দেখুন। সাথে Fast Startup-ও বন্ধ রাখা ভালো। এজন্য Control Panel > Hardware and Sound > Power Options > System Settings > Choose what the power buttons do থেকে Turn on fast startup আনচেক করে দিন।

যদি উইন্ডোজের পাশাপাশি ইন্সটল করতে চান, তাহলে অন্তত ২০-৩০ জিবি জায়গার ব্যবস্থা করে নিন লিনাক্স ইন্সটলের জন্য। MBR সিস্টেমে ৪টির বেশি প্রাইমারী পার্টিশন করা যায় না, তাই যদি ইতোমধ্যেই ৪টি পার্টিশন থাকে, তাহলে একটি সম্পূর্ণ খালি করে ফেলুন। সবচেয়ে জরুরী ফাইলগুলো ব্যাকআপ রাখার পরামর্শ থাকবে। খালিকৃত জায়গায় উইন্ডোজ পার্টিশন ম্যানেজার থেকে আনঅ্যালোকেটেড স্পেস তৈরি করে নিন। আর উইন্ডোজের পরিবর্তে বা পুরো হার্ডডিস্ক ফরমেট দিতে চাইলে কিছু করার দরকার নেই, শুধু প্রয়োজনীয় সবকিছু ব্যাকআপ নিয়ে নিন।

গুরুত্বপূর্ণ! লিনাক্স ইন্সটলের সময় আপনি পার্টিশনগুলো (C, D, E) এভাবে দেখতে পাবেন না। তাই যে ড্রাইভটিতে লিনাক্স ইন্সটল করতে চাচ্ছেন, সেটির মোট সাইজ ও ফ্রি স্পেস মুখস্থ বা কোথাও লিখে রাখুন। কেননা, সাইজ দেখেই আমাদের ড্রাইভ চিনতে হবে।

এবার তৈরিকৃত বুটেবল ডিস্ক থেকে বুট করুন। কিছু ডিস্ট্রো লাইভ চালানোর সুযোগ দেয় ইন্সটল না করেই, সেক্ষেত্রে লাইভ চালিয়ে দেখে নিতে পারেন। ইন্সটলের সময় বাকি ধাপগুলো (ভাষা নির্বাচন, টাইম জোন, অ্যাকাউন্ট তৈরি ধরণের) আশা করি সমস্যা হবে না। পার্টিশনিংয়ের ধাপটি সেন্সিটিভ।

নিচের ছবিটি জরিন ওএসের। ওএসভেদে সব অপশন এক না-ও হতে পারে। এই ধাপে ভুল করলে সমস্যা। এখানে:

১. Install allongside অপশনটি আপনার বর্তমান ওএস রেখে দিয়ে তার সাথে আমাদের কিছুক্ষণ আগে খালি করে রাখা unallocated স্পেসে লিনাক্স ইন্সটলের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।

২. Erase disk and install অপশনটি পুরো হার্ডডিস্কের সব ডেটা মুছে লিনাক্স ইন্সটল করার জন্য। অনেকেই অতি উৎসাহে এটা দিয়ে হার্ডডিস্ক ক্লিন করে ফেলে। তাই আপনার হার্ডডিস্কের ডেটার প্রতি মায়া থাকলে এটা সিলেক্ট করবেন না। তবে আপনার পিসিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না থাকলে বা ব্যাকআপ থাকলে এবং আপনি সত্যিই হার্ডডিস্ক ক্লিন করে লিনাক্স ইন্সটল করতে চাইলে এটা নির্বাচন করুন।

৩. আরেকটি অপশন দেখা যেতে পারে, যেটি ছবিতে নেই (কারণ আমার পিসিতে উইন্ডোজ নেই), Replace Windows, এটা নির্বাচন করুন, যদি আপনি উইন্ডোজ (ও সি ড্রাইভের সবকিছু) মুছে ফেলে লিনাক্স ইন্সটল করতে চান। উল্লেখ্য, বাকি ড্রাইভগুলো ঠিক থাকবে।

৪. Something else হলো এডভান্সড অপশন। এর পরিবর্তে অন্য ওএসে Manual, Advanced এরকম অপশন থাকতে পারে। সাধারণভাবে, এটা ব্যবহার করারই পরামর্শ থাকবে, কারণ এটি পাওয়ারফুল।

পুরো হার্ডডিস্ক ফর্মেট করলে ২য় অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন। অন্যথায় Something Else ব্যবহারের পরামর্শ থাকবে। ডিস্ট্রোভেদে ইন্সটলারে এটি Advanced বা এরকম কোন নামে থাকতে পারে। এটি সিলেক্ট করে পরের ধাপে পার্টিশনগুলো দেখতে পাবেন। MBR সিস্টেমে পার্টিশন টাইপ লজিকাল দিলে চারটির অধিক পার্টিশন তৈরি করা যায়। তবে লজিকাল পার্টিশনগুলো অবশ্যই পরপর থাকবে, অর্থাৎ একটি লজিকাল, একটি প্রাইমারী, একটি লজিকাল এমন হবে না।

উইন্ডোজের পরিবর্তে ইন্সটল করতে চাইলে সি ড্রাইভ ও সিস্টেম রিজার্ভড স্পেস (৫০০ এম্বির মত একটি ড্রাইভ) মুছে দিন আর পাশাপাশি ইন্সটল করতে চাইলে আগে যে খালি স্থান বের করা হয়েছিলো তা ব্যবহার করুন। এখানে নিচের মত পার্টিশন তৈরি করুন।

পার্টিশন যেক্ষেত্রে দিতে হবে Size Type Use as Mount Point
BIOS-Boot Legacy সিস্টেমে 1 MB Primary/Logical Reserved BIOS boot area*
/boot/efi EFI সিস্টেমে ~512 MB Primary/Logical Ext4* /boot
swap র‍্যাম কম হলে** 2 GB Primary/Logical linuxswap
/ আবশ্যক অবশিষ্ট খালি জায়গা*** Primary/Logical Ext4 /

*কিছু অপারেটিং সিস্টেমে Reserved BIOS boot area অপশন থাকবে না। সেক্ষেত্রে / এর সাথে boot ফ্ল্যাগ যুক্ত করে দিতে হবে। EFI System Partition না থাকলে নিম্নরূপে তৈরি করতে হবে।

পার্টিশন আবশ্যিকতা Size Type Use As Mount Point Flag
/boot/efi আবশ্যক 250 MB Primary Fat32 /boot/efi esp

** swap ভার্চুয়াল র‍্যামের কাজ করে। র‍্যাম ৪ জিবি বা কম হলে সয়াপ স্পেস পারফর্মেন্সে বড় রকম পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এটা ইন্সটলের সময় আলাদা পার্টিশন না করে ইন্সটলের পরে সয়াপ ফাইল হিসেবে করা যায়, টিউটোরিয়াল

*** স্পেস যদি ৬০ জিবির বেশি হয়, তবে / এ ৩০ জিবি (বেশিও দিতে পারেন) বরাদ্দ দিয়ে বাকি স্পেসে / এর অনুরূপ একটি /home পার্টিশন তৈরি করতে পারেন। /home-এ ডকুমেন্টস, পিকচারস, ভিডিও, বিভিন্ন ডেটা থাকে। আলাদা /home করলে সুবিধা হলো পরে অন্য লিনাক্স ডিস্ট্রো ইন্সটলের সময় /home রেখে দেওয়া যায়। না দিলে / পার্টিশন স্পেস থেকে /home শেয়ার হবে।

বাকি ইন্সটলেশন আশা করি কোন সমস্যা হবে না।

সফটওয়্যার ইন্সটল

লিনাক্স সফটওয়্যার

লিনাক্স সফটওয়্যারগুলোকে আমি আলোচনার সুবিধার্থে তিনভাগে ভাগ করে নিচ্ছি।

  1. ন্যাটিভ লিনাক্স সফটওয়্যার: সাধারণ লিনাক্স সফটওয়্যার।
  2. Snap/Flatpak/Appimage: এগুলোকেও ন্যাটিভ বলা চলে আসলে। তবে ম্যানেজমেন্টে পার্থক্য রয়েছে।
  3. অন্যান্য সিস্টেমের সফটওয়্যার। যেমন, কিছু উইন্ডোজ সফটওয়্যার WINE, Proton Crossover প্রভৃতি পদ্ধতিতে চালানো সম্ভব।

সফটওয়্যার ইন্সটলেশন

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমগুলোর রিপোজিটরীতে সাধারণত অধিকাংশ মেজর ওপেন সোর্স অ্যাপগুলো পেয়ে যাবেন। যে অ্যাপগুলো রিপোতে নেই, বা পুরনো ভার্সন আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে আরো কিছু বিকল্প পদ্ধতি আছে। যেমন উবুন্টু ভিত্তিক ডিস্ট্রোতে .deb, যা অনেকটা উইন্ডোজের .exe এর মত, PPA বা Personal Package Archive, যেখানে এক বা একাধিক অ্যাপ থাকতে পারে, আর্চভিত্তিক ডিস্ট্রোতে AUR বা Arch User Repository। পার্থক্য হলো PPA গুলো বিচ্ছিন্ন, একটি PPA তে কয়েকটি অ্যাপ থাকতে পারে, আর AUR সমন্বিত, এক জায়গাতেই সব আছে। আরেকটি পদ্ধতি, যেটা অবশ্য সাধারণ ব্যবহারকারীদের ততটা প্রয়োজন হয় না, তা হলো সোর্স থেকে বিল্ড।

এরপর আমরা Snap ও Flatpak এর কথা যদি বলি, এই দুটো ব্যবহারিক দিক দিয়ে অনেকটা কাছাকাছি। সব লিনাক্স ডিস্ট্রোতে একই নিয়মে সফটওয়্যার ইন্সটল ও ম্যানেজের দুটি পদ্ধতি। Snap StoreFlathub থেকে যথাক্রমে স্ন্যাপ ও ফ্ল্যাটপ্যাক অ্যাপ ও তা ইন্সটলেশন সংক্রান্ত নির্দেশনা পাওয়া যায়। তবে Snap কেন্দ্রীভূত হলেও, Flatpak পুরোপুরি কেন্দ্রীভূত নয়। অর্থাৎ, Flathub এর বাইরেও থার্ড পার্টি সোর্সে কিছু ফ্লাটপ্যাক অ্যাপ পাওয়া যেতে পারে।

অ্যাপইমেজের ক্ষেত্রে ইন্সটলের কোন প্রয়োজন নেই। এখানে একটি ফাইলেই অ্যাপের সবকিছু থাকে। ডাউনলোড করে এক্সিকিউটেবল করে নিয়ে সরাসরি ব্যবহার করা যায়। অ্যাপইমেজের অবশ্য কোন কেন্দ্রীয় রিপো নেই। তবে এখানে বেশ কিছু অ্যাপইমেজ রয়েছে। সাধারণত, Properties থেকে এক্সিকিউটেবল করে নেওয়া যায়।

উইন্ডোজের কিছু অ্যাপ লিনাক্সে চালানো সম্ভব, সব অ্যাপ নয়। এর মূলে রয়েছে WINE, একটি কম্প্যাটিবিলিটি লেয়ার। এরপর Proton, PlayOnLinux, Crossover (এটি পেইড) প্রভৃতি, যারা প্রত্যেকে WINE ভিত্তিক। তবে আমরা আজ এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব না।

আমরা অনেকেই হয়ত জানি, লিনাক্সে ভাইরাস-ম্যালওয়্যার নেই। কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে এটা সত্য, আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম আর এন্টিভাইরাস সাধারণভাবে প্রয়োজন হয় না। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে বড় একটি কারণ সফটওয়্যার প্রাপ্তির পদ্ধতি বলে আমি মনে করি। উইন্ডোজে সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে গিয়েই আমরা অনেক সময় ভাইরাস ডাউনলোড করে বসি। লিনাক্সে তেমনটা নয়।

সফটওয়্যার ইন্সটলের ক্ষেত্রে মূল রিপো থেকে ইন্সটল করাটা সবচেয়ে নিরাপদ। এরপর কোন  সফটওয়্যারের অফিসিয়াল PPA, .deb, AUR, Snap, Flatpak, Appimage প্রভৃতি যদি থাকে। Flathub অথবা Snap Store থেকে সাধারণত নিশ্চিন্তেই ইন্সটল করা যায়, যদিও Snap অ্যাপেও একবার ম্যালওয়্যার পাওয়া গিয়েছিলো, তবে সেটা রেয়ার কেস। তৃতীয় পক্ষের সোর্স, যেমন আনঅফিসিয়াল PPA, Appimage, deb প্রভৃতি ডাউনলোড বা ইন্সটল করার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার বিষয়ে সচেতন থাকা ভালো।

গ্রাফিকাল পদ্ধতি

সফটওয়্যার ইন্সটলের জন্য লিনাক্স ডিস্ট্রোতে সাধারণত একটি সফটওয়্যার ম্যানেজার পেয়ে যাবেন। এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে সফটওয়্যার সাজানো রয়েছে এবং খুব সহজেই প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার খুঁজে নিয়ে ডাউনলোড করা যায়। ডিস্ট্রিবিউশনভেদে সফটওয়্যার ম্যানেজার ভিন্ন হতে পারে। যেমন: উবুন্টু/ফিডোরা/জরিন ওএস:সফটওয়্যার (gnome-software), লিনাক্স মিন্ট: সফটওয়্যার ম্যানেজার, মানজারো: প্যামাক (pamac), কেডিই নিয়ন/কুবুন্টু: ডিসকোভার (discover), এলিমেন্টরী: অ্যাপ সেন্টার ইত্যাদি। বর্তমানে এদের অধিকাংশ Snap ও Flatpak সমর্থন করে।

নাম-চেহারা ভিন্ন হলেও ব্যবহার সবগুলোই সহজ। আমাদের সফটওয়্যার ম্যানেজার চালু করতে হবে, ক্যাটাগরী অনুযায়ী বা সার্চ করে পছন্দের অ্যাপটি খুঁজে বের করতে হবে। অনেক সফটওয়্যার ম্যানেজার সফটওয়্যার সোর্স নির্বাচনের সুযোগ দেয়, অর্থাৎ, মূল রিপো, Snap, Flatpak কোন সোর্স থেকে ইন্সটল করা হবে। সোর্স ঠিক করে ইন্সটল করতে হবে। ও, হ্যাঁ, ইন্সটলের সময় সাধারণত পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়। ইন্সটলের সময় সেট করা অথবা পরবর্তীতে পরিবর্তন করে থাকলে সেই পাসওয়ার্ডটি ব্যবহার করতে হবে। সফটওয়্যার ইন্সটলের সাথে ইন্সটলকৃত সফটওয়্যারগুলো আপডেট বা রিমুভও করা যায় সহজেই।

কমান্ড লাইন পদ্ধতি

গ্রাফিকাল পদ্ধতিটা বেশ সহজ, তাই না? কমান্ড লাইন শুনলেই গা কেমন ছমছম করে, তাই না? আসলে এই পদ্ধতিটা কিন্তু আরো সহজ আর মজার। যেমন গ্রাফিকাল সফটওয়্যার ম্যানেজার লোড হতে, সফটওয়্যার সার্চ করতে একটু দেরি হতে পারে। কমান্ড লাইনে তা আরো দ্রুত করা সম্ভব। উবুন্টু, মিন্টসহ ডেবিয়ানভিত্তিক সিস্টেমগুলোত এজন্য apt ও মানজারোসহ আর্চভিত্তিক সিস্টেমগুলোতে pacman ব্যবহার হয়।

ধরা যাক, আমি VLC, GIMP, Inkscape, LibreOffice প্রত্যেকটি ইন্সটল করতে চাই। সফটওয়্যার ম্যানেজার থেকে প্রতিটি সার্চ দেওয়া ও ইন্সটল করা একটু হলেও সময়সাপেক্ষ। তবে কমান্ড লাইনে আমার একটি মাত্র কমান্ড প্রয়োজন, ডেবিয়ানভিত্তিক হলে sudo apt install vlc gimp inkscape libreoffice আর আর্চভিত্তিক হলে sudo pacman -S vlc gimp inkscape libreoffice

এখানে sudo অর্থ super user do। সহজভাবে বললে, এই কমান্ড আমাদের এডমিনিস্ট্রেশনের সুপার পাওয়ার দিবে। সাধারণত sudo কমান্ড ব্যবহার করলে এডমিনিস্ট্রেশন পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়। apt (Advanced Package Tool) ও pacman দুটো কমান্ড লাইন প্যাকেজ ম্যানেজার। install ও -S লেখার মাধ্যমে যথাক্রমে apt ও pacman কে সফটওয়্যার ইন্সটলের কথা বলা হচ্ছে। এখানে মূলত apt-get লেখার কথা, তবে apt লিখলেই চলে। এরপর প্যাকেজের নাম সাধারণত ছোট হাতের অক্ষরে কোন স্পেস ছাড়া লিখতে হয়। একাধিক প্যাকেজ হলে মাঝে স্পেস দিতে হবে।

তো এখন আমরা apt ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় কমান্ডগুলো দেখে নিই,

সফটওয়্যার ডেটাবেজ আপডেট: sudo apt update

সফটওয়্যার ইন্সটল : sudo apt install package1 package2…

সব সফটওয়্যার লেটেস্ট ভার্সনে আপগ্রেড: sudo apt upgrade

সফটওয়্যার আনইন্সটল: sudo apt remove package1 package2…

কনফিগারেশন তথ্যসহ সফটওয়্যার আনইন্সটল: sudo apt purge package1 package2…

অপ্রয়োজনীয় ডিপেন্ডেন্সি রিমুভ: sudo apt autoremove

pacman এর ক্ষেত্রে,

সফটওয়্যার ডেটাবেজ আপডেট: sudo pacman -Syy

সফটওয়্যার ইন্সটল : sudo pacman -S package1 package2…

সব সফটওয়্যার লেটেস্ট ভার্সনে আপগ্রেড: sudo pacman -Syu

সফটওয়্যার আনইন্সটল: sudo asudo pacman -R package1 package2…

কনফিগারেশন তথ্যসহ সফটওয়্যার আনইন্সটল: sudo pacman -Rn package1 package2…

অপ্রয়োজনীয় ডিপেন্ডেন্সিসহ সফটওয়্যার আনইন্সটল: sudo -Rs package1 package2…

কনফিগারেশন তথ্য ও অপ্রয়োজনীয় ডিপেন্ডেন্সিসহ সফটওয়্যার আনইন্সটল: sudo -Rsn package1 package2…

PPA ব্যবহার

PPA গ্রাফিকাল পদ্ধতিতে যোগ করার পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, উবুন্টুতে Software & Updates অ্যাপ > Software Sources > Other Software > Add এখানে ppa:ppa_name লিখে যুক্ত করতে হবে। transmissionbt এই PPA টি যুক্ত করার জন্য এভাবে লিখতে হবে ppa:transmissionbt। কমান্ড লাইন ব্যবহার সাধারণত সুবিধাজনক।

PPA যোগ করার কমান্ড: sudo add-apt-repository ppa:ppa_name

PPA রিমুভ করার কমান্ড: sudo add-apt-repository –remove ppa:ppa_name

AUR ব্যবহার

আর্চ ভিত্তিক ডিস্ট্রোগুলোতে গ্রাফিকাল প্যাকেজ ম্যানেজারের মধ্যে Pamac খুব জনপ্রিয়। এখানে AUR ব্যবহারের জন্য Pamac এর মেনু > Preferences > AUR > Enable AUR Support থেকে AUR এনাবল করে নিতে হবে। মানজারোসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমান্ড লাইনের জন্য কোন টুল সাধারণত প্রি-ইন্সটল্ড থাকে না। ম্যানুয়ালি সোর্স থেকে বিল্ড করতে হয়। অবশ্য yay সহ বেশ কিছু কমান্ড লাইন AUR ম্যানেজার ইন্সটল করে নেওয়া যেতে পারে। আপাতত আমরা এ নিয়ে আলোচনা করছি না।

সহায়তা

আমি দুঃখিত, সুনির্দিষ্টভাবে সোর্সগুলো উল্লেখ করতে পারছি না। এই লেখার জন্য এত জায়গা থেকে নানাবিধ সহায়তা নেওয়া হয়েছে, যা মনে রাখা বা তালিকা করে রাখা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন লিনাক্সের ওয়েবসাইট ও ডকুমেন্টেশন, লিনাক্স নিয়ে বিভিন্ন লেখা, বিভিন্ন ইউজারের সহযোগিতা নিয়ে এই লেখা। স্ক্রিনশটগুলোর কয়েকটি আমার ক্যাপচার করা, কয়েকটি সংশ্লিষ্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, OMG! Ubuntu! এবং It’s FOSS থেকে নেওয়া।

লেখাটি কি ভালো লাগছে? আপনার ভালো লাগা কিংবা না লাগা দুটোই কমেন্ট বক্সে জানান। একটি সংক্ষিপ্ত কমেন্ট করতে ১ মিনিটেরও কম সময় প্রয়োজন এবং আমরা আশা করছি আপনি এই সময়টুকু খরচ করবেন। এরকম একটি লেখার জন্য অবশ্যই ইফোর্ট প্রয়োজন হয়, তবে অবশ্যই, এধরণের লেখা পড়াও বেশ ধৈর্য্যের ব্যাপার।

তাই আংশিক বা সম্পূর্ণ, লেখাটি যদি পড়ে থাকেন, তাহলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর সেই সাথে আমাদের নিয়নবাতি ব্লগ থেকে ঘুরে আসতে ভুলবেন না!

একটি নিয়নবাতি পরিবেশনা

প্রসঙ্গত বলে রাখি, নাম নির্বাচন করার সময় মাথায় আসা বিভিন্ন নামের মধ্যে নিয়নবাতি নামটি পছন্দ হয় এবং ডোমেইনটিও এভেইলেবল পেয়ে যাই। এর সাথে নিশান আহমেদ নিয়ন ভাইয়ের নিয়নবাতি সিরিজটির কোন সম্পর্ক নেই এবং তখন পর্যন্ত আসলে সিরিজটির সাথে পরিচিতও ছিলাম না।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম।

The post ৮ হাজার শব্দে লিনাক্সের পরিচয় ও সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন appeared first on Trickbd.com.



source https://trickbd.com/technology-updates/686981



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ