ক্লাউড কম্পিউটিং: দুনিয়া বদলে দেয়া ইন্টারনেটের বিশাল ডেটাবেজের রহস্য উন্মোচন।

Ads Inside Post

ক্লাউড কম্পিউটিং: দুনিয়া বদলে দেয়া ইন্টারনেটের বিশাল ডেটাবেজের রহস্য উন্মোচন।

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি।

আজকে আমি একটা ইনফরমেটিভ পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা এই পোস্টের মাধ্যমে ক্লাউড কম্পিউটিং এর খুটিনাটি ও বিস্তারিত জানতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক।

ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

প্রথমেই কিছু উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। আমরা সবাইই গুগল ড্রাইভ সম্বন্ধে কম-বেশি জানি। কোনো ফাইল ব্যাকাপ রাখতে বা ইন্টারনেটে সেইভ রাখতে গুগল ড্রাইভ খুবই কার্যকরী একটা উপায়। এছাড়া আমরা অনেকে ইন্টারনেটেই ফটো ইডিট করে থাকি কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড করা ছাড়াই। যেমনঃ ক্যানভা দিয়ে ফটো ইডিট। আমরা ফেসবুকে ফটো, ভিডিও আপলোড দেই।

আবার অনলাইনে গেমস খেলি তাও ডাউনলোড করা ছাড়াই। এই যে ইন্টারনেটে এতকিছু আমরা সেইভ করে রাখি বা ইন্টারনেটেই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারি, গেমস খেলতে পারি তাও ডাউনলোড করা ছাড়াই। এর জন্য তো স্টোরেজ এর দরকার পড়ে। এটা ক্লাউডে বা “ইন্টারনেট মেঘ” এ জমা থাকে। এই সবটুকু প্রোসেস কেই ক্লাউড কম্পিউটিং বলা হয়।

আশা করি সহজ ভাষায় বুঝতে পেরেছেন।

এখনকার ডিজিটাল বিশ্বে ডেটা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্লাউড কম্পিউটিং এক যুগান্তকারী টেকনোলজি বা উদ্ভাবন। এটা ডেটা সেভিং, অ্যাক্সেস, ও ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। আগে ডেটা সংরক্ষণের জন্য হার্ডড্রাইভ ও লোকাল সার্ভারের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই ডেটা অ্যাক্সেস করা সম্ভব।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ক্লাউড কম্পিউটিং হলো একটা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে ইউজার রা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা (যেমনঃ স্টোরেজ, প্রসেসিং, নেটওয়ার্কিং) পেয়ে থাকে। এটা মূলত রিমোট সার্ভারের মাধ্যমে কাজ করে। এখানে ইউজার কে কোনো অতিরিক্ত হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার ইউজ করার প্রয়োজন হয় না।  অফলাইনে কোনোরূপ স্টোরেজ কমানো ছাড়াই ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সে এইসব সেবা পেয়ে থাকে।

ব্যপার টা ইন্টারেস্টিং না? চলুন আরো জানি এই ব্যপারে।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে কি কি লাগে?

১. সার্ভার

সার্ভার হল ক্লাউড কম্পিউটিং এর মূল ভিত্তি, যা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সার্ভিস প্রোভাইড করে থাকে। এটা সাধারণত শক্তিসালী কম্পিউটার সিস্টেম বা ভার্চুয়াল মেশিন হিসেবে কাজ করে ও একাধিক ইউজার কে একই সাথে সার্ভিস দিতে পারে।

২. স্টোরেজ

ক্লাউড স্টোরেজ হচ্ছে ইউজার দের ডেটা সংরক্ষণের জন্য ডিজাইন করা একটা সিস্টেম। এটা ৩ ধরনের হতে পারে। তা হলোঃ

ব্লক স্টোরেজঃ

ব্লক স্টোরেজ হলো একটি উচ্চ কার্যক্ষমতা সম্পন্ন ডেটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা যা ভার্চুয়াল মেশিন। ডেটাবেস ও অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো প্রধাণত পারফরমেন্স বেইজ হয়ে থাকে। এখানে ডেটা কে ছোট ছোট ব্লকে ভাগ করে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি ব্লককে আলাদাভাবে অ্যাক্সেস করা যায়। এটা দ্রুত ডেটা প্রসেসিং নিশ্চিত করে থাকে। (যেমনঃ Amazon EBS)

ফাইল স্টোরেজঃ

ফাইল স্টোরেজ হলো ট্রেডিশনাল বা পুরনো ফাইল ভিত্তিক স্টোরেজ সিস্টেম। এতে ডেটা একটা ফাইল সিস্টেম দিয়ে পরিচালিত হয়। মূলত ইউজারের ব্যক্তিগত ব্যবহার ও অপরকে সাহায্য করার  জন্য ব্যবহৃত হয়। (যেমনঃ Google Drive, Dropbox)

অবজেক্ট স্টোরেজঃ

অবজেক্ট স্টোরেজ হচ্ছে একটা বড় পরিমাণের আনস্ট্রাকচার্ড বা অসংগঠিত ডেটা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত একটা সাশ্রয়ী স্টোরেজ ব্যবস্থা। এখানে ডেটাকে “অবজেক্ট” হিসেবে সেইভ করা হয়, যার প্রতিটি ডেটায় ইউনিক আইডেন্টিফায়ার, মেটা ডাটা (মেটাডাটা হলো অন্য একটি ডেটা সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী একটা ডেটা) ও অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সংযুক্ত থাকে। (যেমন: Amazon S3, Google Cloud Storage)

৩. নেটওয়ার্কিং

নেটওয়ার্কিং হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং এর একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা বিভিন্ন ক্লাউড রিসোর্স (সার্ভার, স্টোরেজ, ডাটাবেজ) ও ইউজার দের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে থাকে। ইন্টারনেট বা প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সমিশন, অ্যাপ্লিকেশন হোস্টিং ও ক্লাউড সার্ভিস প্রদান করে এই নেটওয়ার্কিং। আইপি অ্যাড্রেস ম্যানেজমেন্ট, ফায়ারওয়াল ও রাউটিং ম্যানেজমেন্ট, ভিপিএন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।

নেটওয়ার্কিং এর মূল উপাদান গুলো হচ্ছেঃ

ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কঃ

ক্লাউড এর মাঝে ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক (VPC – Virtual Private Cloud বা VNet – Virtual Network) বানানো হয়, যা ইউজারদের নিজেদের নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি করতে দেয়। এটা ক্লাউড রিসোর্স গুলোর মধ্যে সেইফ কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করে। (যেমনঃ AWS VPC, Google Cloud VPC)

লোড ব্যালেন্সিংঃ

লোড ব্যালেন্সার হল একটি নেটওয়ার্কিং উপাদান যা একাধিক সার্ভারের মধ্যে ট্রাফিক সমানভাবে বিতরণ করে। এটা সার্ভারের উপর চাপ কমাতে ও উচ্চতর কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। (যেমনঃ AWS Elastic Load Balancer ELB, Azure Load Balancer, Google Cloud Load Balancer)

কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্কঃ

কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক বা CDN হল একটা ডিস্ট্রিবিউটেড বা বিভাজিত নেটওয়ার্ক যা বিশ্বব্যাপী ডেটা সেন্টার এর মাধ্যমে কনটেন্ট দ্রুত ডেলিভারির জন্য ব্যবহৃত হয়। এটা লেটেন্সি বা বিলম্ব কমায় ও ওয়েবসাইট এর ভিডিও স্ট্রিমিং এর পারফরম্যান্স উন্নত করে। (যেমনঃ Akamai CDN, AWS CloudFront, Cloudflare CDN)

ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কঃ

ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা VPN ক্লাউড সার্ভার ও ইউজার দের মধ্যে একটি এনক্রিপ্টেড বা নিরাপদ সংযোগ তৈরি করে থাকে। এটা পাবলিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিরাপদভাবে ডেটা ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করে। ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালীন আমরা সবাইই কম-বেশি ভিপিএন ব্যবহার শিখেছি, যখন এক মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী “ইন্টারনেট নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যেতো”!

ডোমেইন নেইম সার্ভিসঃ

ডোমেইন নেইম সার্ভিস বা DNS হচ্ছে একটা ক্লাউড নেটওয়ার্কিং সার্ভিস, যা ডোমেইন নেইম কে আইপি অ্যাড্রেসে কনভার্ট করে থাকে, ফলে ব্যবহারকারীরা সহজেই ওয়েবসাইট এবং ক্লাউড পরিষেবাগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। সহজ ভাষায়, আপনি শুধু ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেইম ব্যবহার করেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ যে প্রোসেসিং বা আইপি অ্যাড্রেস জনিত কাজ-বাজ তা করে থাকে এই ডোমেইন নেইম সার্ভিস বা ডিএনএস। (যেমনঃ AWS Route 53, Google Cloud DNS, Azure DNS)

৪.ডেটাবেজ

ক্লাউড কম্পিউটিং এ ডেটাবেজ ব্যবহৃত হয় ডেটা সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও পরিচালনার জন্য। আমরা এবার এর প্রকারভেদ সম্বন্ধে জানবো।

ডেটাবেজ দুই ধরণের হয়ে থাকে।

Relational Database (SQL-based):

Relational Database Management System হলো এমন একটি ডেটাবেজ যেখানে ডেটা কে টেবিল আকারে সংরক্ষণ করা হয় এবং SQL বা Structured Query Language ব্যবহার করে পরিচালিত হয়। ব্যাংকিং সিস্টেম, ই-কমার্স ওয়েবসাইট, কর্পোরেট সফটওয়্যার, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রে এই ডেটাবেজ ব্যবহার করা হয়। (যেমনঃ MySQL, PostgreSQL, Oracle DB)

NoSQL Database:

NoSQL ডেটাবেজ হচ্ছে এমন একটি ডেটাবেজ যা টেবিল ভিত্তিক স্ট্রাকচার অনুসরণ করে না এবং Structured বা সংগঠিত, Semi-Structured বা কিছুটা সংগঠিত ও Unstructured Data বা অসংগঠিত ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। (যেমনঃ MongoDB, Firebase, Cassandra)

ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ধরন

ক্লাউড কম্পিউটিং মূলত ৩ টা মডেলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। চলুন জেনে নিই।

Infrastructure as a Service (IaaS)

IaaS মডেলে ক্লাউড ইউজার দের ভার্চুয়াল হার্ডওয়্যার (যেমনঃ সার্ভার, স্টোরেজ ও নেটওয়ার্কিং) সার্ভিস প্রদান করা হয়ে থাকে। এটা বড় বড় অরগানাইজেশন বা কম্পানির জন্য ভালো। কারণ তারা নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে তাদের সম্পদ বাড়াতে বা কমাতে পারে।

যেমনঃ Amazon Web Services (AWS), Google Cloud, Microsoft Azure

Platform as a Service (PaaS)

PaaS মডেলের ক্ষেত্রে ডেভলপারদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত করা হয়। এখানে তারা নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি ও চালাতে পারে। এটি সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট কে সহজ ও কার্যকর করে তোলে।

যেমনঃ Google App Engine, Microsoft Azure App Services

Software as a Service (SaaS)

SaaS মডেলে ইউজার রা সরাসরি সফটওয়্যার সার্ভিস পেয়ে থাকে। এগুলো সাধারণত ব্রাউজারের মাধ্যমেই অ্যাক্সেস নেয়া যায়।

যেমন: Google Drive, Dropbox, Microsoft Office 365, Canva, Adobe Photoshop Express, Fotor

ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধা

খরচ সাশ্রয়ী

ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করলে এক্সপেনসিভ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার দরকার পড়ে না। এটা বিজনেস এর খরচা কমিয়ে আনে।

ইচ্ছামতো মোডিফাই করা

যেকোনো সময় প্রয়োজন অনুসারে সার্ভিস গুলোর পরিমাণ বাড়ানো বা কমানো যায়।

ডেটা সেইফটি

বড় বড় ক্লাউড সার্ভিস প্রদানকারীরা উন্নত সিকিউরিটি প্রোভাইড করার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষিত রাখে। আর আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।

ইজি অ্যাক্সেসিবিলিটি

ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই যে কোনো জায়গা থেকে ক্লাউড সার্ভিস গুলো ব্যবহার করা যায়।

ব্যাকআপ & রিকভারি

ক্লাউড স্টোরেজে অটোমেটিক ব্যাকআপ নেওয়া হয়। যার ফলে হার্ডওয়্যার সমস্যার দরুণ তথ্য হারানোর রিস্ক কমে।

অনলাইন ফটো & ভিডিও এডিটিং

ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে এখন অনলাইনে ফটো ও ভিডিও এডিট করা যায়। এটা ইউজার দের সহজেই ও দ্রুত কাজ করার সুযোগ দেয়। কোনো প্রকার বাড়তি স্টোরেজ কমানো ছাড়াই এটা ব্যবহার করা যায়।

যেমনঃ Canva, Adobe Photoshop Express, Fotor, WeVideo, Kapwing

গেম স্ট্রিমিং

ক্লাউড কম্পিউটিং গেম স্ট্রিমিং সার্ভিসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ইউজার রা কোনো প্রকার শক্তিসালী হার্ডওয়্যার ছাড়াই হাই পারফরমেন্স এর গেম খেলতে পারেন।

যেমনঃ Google Stadia (২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে), NVIDIA GeForce Now, Xbox Cloud Gaming

ভার্চুয়াল ডেক্সটপ & রিমোট ওয়ার্ক

ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে ইউজার রা ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ও রিমোট ওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন। Virtual Desktop Infrastructure (VDI) হলো এমন একটা টেকনোলজি, যেখানে একটা কেন্দ্রীয় সার্ভারে বা Cloud Server এ ভার্চুয়াল ডেস্কটপ হোস্ট করা হয়। ইউজার রা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই বা যেকোনো জায়গায় বসে সেই ডেস্কটপ অ্যাক্সেস করতে পারে। এটা ব্যবসা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে Remote Work কে সহজ ও কার্যকর করে তুলেছে।

যেমনঃ Amazon WorkSpaces, Microsoft Remote Desktop, Citrix Virtual Apps

ক্লাউড কম্পিউটিং এর চ্যালেঞ্জ সমূহ

ক্লাউড কম্পিউটিং অনেক সুবিধা এনে দিলেও কিছু প্রযুক্তিগত ও কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো ইউজার দের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এখানে কিছু প্রধান চ্যালেঞ্জ ও তা থেকে সেইফ থাকার উপায় তুলে ধরলাম।

নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা (Security & Privacy)

থার্ড পার্টি সার্ভারে সংরক্ষিত থাকার কারণে ইউজার দের ডেটার অননুমোদিত অ্যাক্সেস, ডেটা লিকেজ ও সাইবার এট্যাক এর রিস্ক থাকে। যেমনঃ ২০১৯ সালে Capital One ডেটা ব্রিচে 100+ মিলিয়ন ইউজার এর ডেটা ফাঁস হয়েছিল।

সমাধান:

  • ডেটা এনক্রিপশন (Encryption) ইউজ করা।
  • Zero Trust Security Model  ফলো করা।
  • Multi-Factor Authentication বা MFA চালু করা।
  • VPN ও Firewall ব্যবহার করা। যা নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

নেটওয়ার্ক নির্ভরতা (Internet Dependency)

ক্লাউড পরিষেবা ব্যবহারের জন্য স্ট্যাবল ও ফাস্ট স্পীড ইন্টারনেট কানেকশন থাকা মাস্ট। ইন্টারনেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন হলে ক্লাউড এর উপর নির্ভর করা অ্যাপ্লিকেশন বা ডেটা অ্যাক্সেস করা সম্ভব হয় না।

সমাধান:

  • ক্যাশিং (Caching) ও অফলাইন মোড ব্যবহার করা। তবে এতে আপনার অফলাইনে কিছু স্টোরেজ এর খরচা হতে পারে।
  • CDN বা কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক  ব্যবহার করে লোড কমানো। এটা নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
  • হাইব্রিড ক্লাউড মডেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে কিছু ডেটা লোকাল ডিভাইসে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।

যেমনঃ Google Drive বা Dropbox এর মতো কিছু সেবা অফলাইন মোডে কিছু ডেটা অ্যাক্সেস করার সুবিধা দেয়।

লিমিটেড ইউজার কন্ট্রোল (Limited User Control)

ইউজার দের সার্ভারের ওপর ডিরেক্ট বা প্রত্যক্ষ কন্ট্রোল থাকে না। কেননা ক্লাউড স্ট্রাকচার সম্পূর্ণভাবে সার্ভিস প্রোভাইডার এর নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলে কাস্টমাইজেশন ও কনফিগারেশনে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকেই।  যেমনঃ কিছু অরগানাইজেশন  Amazon Web Services (AWS) থেকে Google Cloud বা Microsoft Azure এ মাইগ্রেশন করেছিলো কারণ একটার চেয়ে অপরটার কাস্টোমাইজেশন লিমিটেড থাকতো।

সমাধান:

  • প্রাইভেট ক্লাউড বা হাইব্রিড ক্লাউড মডেল ব্যবহার করা।
  • SLA (Service Level Agreement) ও Access Control ঠিকমতো সিলেক্ট করা।
  • বিকল্প কোনো ক্লাউড সেলার বা সার্ভার বিবেচনায় রাখা, যারা বেশি কাস্টমাইজেশন অফার করে থাকে।

পারফরম্যান্স ইস্যু (Performance Issues)

শেয়ারড রিসোর্সের কারণে ক্লাউড সার্ভারের লোড বেড়ে গেলে পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে। কিছু ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যান্ডউইথ লিমিটেড করে রাখতে পারে। এতে পারফরম্যান্স ডাউন হয়ে যেতে পারে।

সমাধান:

  • লোড ব্যালেন্সার ব্যবহার করে সার্ভারের চাপ কমানো যায়।
  • অটোস্কেলিং চালু করা। এর মাধ্যমে সার্ভারের লোড অনুযায়ী রিসোর্স বাড়ানো বা কমানো যায়।
  • Edge Computing ব্যবহার করা, যাতে ক্লাউডের পরিবর্তে লোকাল ডিভাইসে কিছু ডেটা প্রসেস করা যায়।

যেমনঃ ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস Netflix ও YouTube ক্লাউডের মাধ্যমে কাজ করে এবং CDN ও Load Balancer ব্যবহার করে পারফরম্যান্স ঠিক রাখে।

হিডেন কস্ট (Hidden Costs)

ক্লাউড সার্ভিসের খরচ প্রথম দিকে কম মনে হলেও ডেটা ট্রান্সফার, স্টোরেজ ও অতিরিক্ত সার্ভিস এর জন্য লুকানো খরচ বা হিডেন কস্ট যুক্ত হতে পারে। এটা দীর্ঘমেয়াদে ব্যয়বহুল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। যেমনঃ AWS ও Google Cloud অনেক সময় Outbound Data Transfer বা APIs Usage এর খরচা নিয়ে থাকে, যা আগেভাগে হিসাব না করলে বাজেটের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

সমাধান:

  • Pay-as-you-go মডেল বুঝে গ্রহণ করা ও অপ্রয়োজনীয় সার্ভিস বন্ধ করা।
  • Reserved Instances বা Subscription Model বেছে নেওয়া, যা দীর্ঘমেয়াদের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে পারে।
  • Billing Alerts সেট আপ করা, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ এড়ানো সম্ভব হয়।

ডাটা মাইগ্রেশনে জটিলতা

একবার কোনো নির্দিষ্ট ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে ডেটা আপলোড করলে সেটা অন্য প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করা বা Migration করা অনেক সময় কষ্টকর ও ব্যয়বহুল হতে পারে। অনেক সময় কোনো অরগানাইজেশন বা কম্পানি AWS থেকে Google Cloud বা Azure এ যেতে চাইলেও ডাটা ট্রান্সফারের জটিলতা সৃষ্টি হয় ও খরচের কারণে আটকে যায়।

সমাধান:

  • Multi-Cloud ও Hybrid Cloud স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা।
  • ওপেন স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাটে ডেটা সংরক্ষণ করা।
  • Vendor Lock-in এড়ানোর জন্য Open Source Cloud ব্যবহার করা (যেমন OpenStack, Kubernetes)।

আইনগত ইস্যু (Legal Issues)

বিভিন্ন দেশে ডেটা সুরক্ষা আইন বা Data Protection Laws রয়েছে, যা ক্লাউড সার্ভিস গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমনঃ ইউরোপের GDPR (General Data Protection Regulation) আইন অনুযায়ী, ইউরোপীয় গ্রাহকদের ডেটা ইউরোপিয়ান সার্ভারে সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক।

সমাধান:

  • আন্তর্জাতিক ডেটা সুরক্ষা নিয়ম অনুসরণ করা। যেমনঃ GDPR, HIPAA, ISO 27001 ইত্যাদি।
  • ডেটা লোকেশন নির্ধারণ করা যেন এটি নির্দিষ্ট দেশের আইন মেনে চলে।
  • Legal Agreement (SLA) ভালোভাবে যাচাই করে নেয়া।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভবিষ্যৎ কি?

ক্লাউড কম্পিউটিং টেকনোলজি দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি ডিজিটাল দুনিয়ার বেইস বা স্তম্ভ হয়ে উঠবে বলা চলে। AI, IoT, 5G, Edge Computing ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর মতো প্রযুক্তির সাথে এর সমন্বয় নতুন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।

এআই ও মেশিন লার্নিং আরো শক্তিসালী হবে।

  • ক্লাউড ভিত্তিক এআই মডেল ডেটা বিশ্লেষণ, অটোমেটিক ডিসিশন মেকিং ও ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা আরো বাড়াবে।
  • মেশিন লার্নিং অ্যাজ আ সার্ভিস (MLaaS) আরও জনপ্রিয় হবে, যেখানে ডেভলপাররা সহজেই AI মডেল তৈরি ও ব্যবহার করতে পারবে। যেমনঃ Google Cloud AI, AWS SageMaker, Microsoft Azure AI

হাইব্রিড ক্লাউড ও মাল্টি-ক্লাউড সল্যুশন আরো বৃদ্ধি পাবে।

  • অনেক অরগানাইজেশন Public Cloud (AWS, Google Cloud) ও Private Cloud (On-Premise Servers) একসাথে ব্যবহার করবে।
  • মাল্টি-ক্লাউড স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করা হবে, যেখানে একাধিক ক্লাউড সার্ভিসের মধ্যে ডেটা শেয়ার করা যাবে। যেমনঃ IBM Hybrid Cloud, Google Anthos, Microsoft Azure Arc

Edge Computing ও 5G টেকনোলজির সমন্বয় হবে।

  • Edge Computing অর্থাৎ ডাটা প্রসেসিং ক্লাউডের পরিবর্তে সরাসরি লোকাল ডিভাইসে (IoT Devices, Smart Sensors) করা হবে, যা ফাস্ট স্পীড নিশ্চিত করবে।
  • 5G নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হয়ে ক্লাউড পরিষেবা আরও দ্রুত ও দক্ষ হবে। যেমনঃ Amazon Wavelength, Azure Edge Zones

সার্ভারলেস কম্পিউটিং আরও জনপ্রিয় হবে।

  • Serverless Computing প্রযুক্তি ডেভেলপারদের সার্ভারের ব্যবস্থাপনার ঝামেলা ছাড়াই অ্যাপ ডেভেলপ করতে দেবে।
  • ব্যয় কমবে এবং স্কেলিং সহজ হবে। যেমনঃ AWS Lambda, Google Cloud Functions, Azure Functions

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও ক্লাউডের সংযোগ সহজতর হবে।

  • ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে জটিল সমস্যা সমাধান করা যাবে, যা সাধারণ কম্পিউটারে সম্ভব নয়।
  • Quantum Computing as a Service (QCaaS) চালু হবে, যাতে গবেষণা ও ব্যবসায়িক বিশ্লেষণে উন্নতি আসবে। যেমনঃ IBM Quantum, Google Quantum AI, Microsoft Azure Quantum

সাইবার সিকিউরিটি আরও শক্তিশালী হবে।

  • AI ও ব্লকচেইন টেকনোলজির মাধ্যমে আরও উন্নত হবে ক্লাউড সিকিউরিটি।
  • Zero Trust Security Model এবং End-to-End Encryption জনপ্রিয় হবে। যেমনঃ Google Cloud Security Command Center, AWS Security Hub

সর্বোপরি বলা যায়, ক্লাউড কম্পিউটিং বর্তমান প্রযুক্তি জগতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটা ব্যক্তি থেকে কর্পোরেট জগতে সবার জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর মাধ্যমে খরচ কমিয়ে ও স্কিল বাড়িয়ে নিরাপদে তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। তবে, নিরাপত্তা ও ডেটা প্রাইভেসি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আরো সচেতন হওয়া জরুরি। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে ক্লাউড কম্পিউটিং আরও উন্নত হবে ও নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করবে।

আপনার যদি ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে আর কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

আমার অন্যান্য পোস্ট দেখে আসতে পারেনঃ

যেকোনো প্রয়োজনেঃ ফেসবুকে আমি

আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ!

The post ক্লাউড কম্পিউটিং: দুনিয়া বদলে দেয়া ইন্টারনেটের বিশাল ডেটাবেজের রহস্য উন্মোচন। appeared first on Trickbd.com.






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ